ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পর্যটনের বাজেট বাজেটের মাজেজা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

জামিউল আহমেদ :: পৃথিবীর কোথাও আমাদের মত বাজেট নিয়ে এত মাতামাতি হয়না। অন্যদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তার দেশের সরকার যেটা ভালো মনে করে বা যেটা ভালো হয় তাই করবে। তবে, যদি কোন কারণে মানুষে বিশ্বাসের জায়গায় অর্থাৎ তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তখন আবার তারা জেগে উঠে। অবশ্য সাধারণত এমন হয়না, যেহেতু উভয় পক্ষই সাবধান এবং সচেতন থাকে।

আমাদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটা। আমরা বাজেট প্রণয়ন থেকেই আস্তে আস্তে প্রস্তুতি নিতে থাকি এবং ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে একশনে চলে যাই। আর তখনই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা, লাঠিপেটা এমন কি টিয়ার গ্যাস ছুড়া। এভাবে কয়েকদিন হৈ-হুল্লোড় আর বাদানুবাদের পর উভয় পক্ষ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং অন্য কোন প্রসঙ্গ এসে বাজেট প্রসঙ্গকে আড়ালে পাঠিয়ে দেয়। তারপর আর কেউ কোন খুঁজ রাখেনা বাজেটের ভাগ্যে কি ঘটেছে।

অথচ ঐ খুঁজ না রাখার সময়টাই বাজেটের আসল ভাগ্য নির্ধারণ হয়। তখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পক্ষগুলো ঘুমিয়ে থাকে। আর এই সুযোগে আমলারা বসে বাজেট থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দকে নিজেদের মত করে মনের সুখে মাজারের শিরনি বিতরণের মত বিতরণ করে। এজন্য তারা পুর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন হেড বা খাতকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পচ্ছন্দ মত সব ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এতে অন্য কেউ দেখার বা জানার এমন কি কিছু করারও কিছু না থাকায় কাজটি তারা নির্বিঘ্নে করতে পারে। অর্থাৎ কোকিলরা অনেক কষ্টে ডিম পাড়ে আর কাকরা কোকিলদের অনুপস্থিতিতে আরামে বসে তা ভক্ষণ করে।

একই ধারার বাইরে নয় আমাদের প্রিয় পর্যটন। প্রতি বছর বাজেট প্রস্তাব হয়, হৈ-চৈ হয়, পাশও হয়। তখন বরাদ্দকৃত অর্থের অঙ্ক দেখে কখনো কদাচিৎ কোন শব্দ হয়; নাহয় বাজেটের বড় সাইজ দেখে সবাই শান্ত হয়ে যায়। ভাবে, টাকার অঙ্কতো কম নয়, অতএব মাশাল্লাহ। কিন্তু পরের খরব আর কেউ কিছুই জানেনা। তবে, বছরান্তে যখন দেখে শুনলাম কি আর পেলাম কি তখন একটু শব্দ করে আবার ঘুম ধরে। অথচ এই খবরটা জানেইনা বাজেট বরাদ্দের টাকাগুলো গেলো কোথায় অর্থাৎ কোন কোন কাকে মিলে এতটা ডিম সাবাড় করলো। তাহলে এতগুলো টাকা নাই হয়ে যাওয়ার মাজেজাটাইবা কি?

মাজেজাটা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে পর্যটনের নিজের নামে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। যে বাজেট বরাদ্দ হয় তা “বেসামরিমক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়” এর নামে হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহনের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন বিমান বন্দর নির্মান, উন্নয়ন, সংস্কার, বিমান ক্রয় ইত্যাদি খাতেই সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয়। বাকিটার মধ্যে থাকে মন্ত্রণালয়ের নিজের খরচের খাতগুলো। তা থেকে আমলাদের শিরনি বিতরণকালে পর্যটনের ভাগ্যে যা জুটে। যা মুল বাজেট বরাদ্দের কয়েক হাজার কোটি টাকার জায়গায় হয়তো কমবেশ একশো কোটি হতে পারে।

অথচ না জেনে না বুঝে আমরা হৈ-চৈ শুরু করে দেই। যেমনটি এবার অর্থাৎ ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে “বেসামরিম বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়” এর জন্য বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব হচ্ছে ২,৪৫৫ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিলো ৫,৬৯৫ কোটি টাকা। এতেই আমাদের সবাই ক্ষুদ্ধ, কিন্তু স্রেফ আগের মতই না জেনে না বুঝে। কেন না পর্যটনের জন্য বরাদ্দ যখন শতকোটি টাকার ঘরেই থাকে এবং আমলারাই তা নির্ধারন করে থাকেন তখন মোট বরাদ্দ আগে থেকে কমলেইবা কি আর বাড়লেইবা কি। এজন্য জানতে হবে পর্যটনের জন্য প্রকৃত বাজেট বরাদ্দ কত, হওয়ার কথা কত এবং এজন্য কি করতে হবে?

এই নিয়ে অর্থাৎ পর্যটনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে আমি বিগত দিনের প্রায় প্রত্যেক অর্থমন্ত্রীর সাথে দেনদরবার করেছি। তাদের প্রত্যেকের ছাফ কথা ছিলো বাজেট বরাদ্দের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাত থাকতে হবে, প্রাপ্ত অর্থ যথানিয়মে খরচ করতে হবে এবং যথা নিয়মে এই খরচের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু আপনি নিয়ম মেনে সুনিদ্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারেন না; অর্থ বরাদ্দ পেলে নিয়ম মত খরচ করতে পারেন না এবং খরচ করার পর নিয়মমত হিসাব দিতে পারেন না। এমতাবস্থায় আপনি বাজেট বরাদ্দ না পেলে আমাদের কি করার আছে। তাই নিয়ম মেনে আসুন পর্যটনের জন্য টাকার অভাব হবেনা।

তাহলে বিষয়টি কি আসলেই তাই? হ্যা, আসলেই তাই। আর এজন্য আমরা এবং বিশেষ করে যারা দায়িত্বে আছেন সেই আমলারাই দায়ী। কেন না পর্যটনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদে তথা চলতি অর্থবছরে কোন প্রকল্পে বা কোন বাবদে কত টাকার প্রয়োজন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব যাবে। তারপর প্রাপ্তি এবং খরচ শেষে যথা নিয়মে হিসাবের প্রয়োজন দেখা দিবে।

কিন্তু যদি পরিকল্পনাই না থাকে এবং খাত সুনির্দিষ্ট করে বাজেটের প্রস্তাব না রাখা যায় তাহলে বাজেট বরাদ্দ কি আকাশ থেকে আসবে। অতএব, অহেতুক চিল্লাপাল্লা না করে যা করার তাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পর্যটনের জন্য বাজেট বরাদ্দ সুনিদ্দিষ্ট এবং পর্যাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে। তাই এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের শুধু লোকদেখানো কিছু কাজ নিয়ে পড়ে না থেকে আসল কাজ করতে হবে। নাহয় যা সব সময় হচ্ছে তাই হতে থাকবে এবং কপাল পোড়া পর্যটনের ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হবেনা।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডিজ (সিটিএস)।

ট্যাগস :

পর্যটনের বাজেট বাজেটের মাজেজা

আপডেট সময় ০২:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

জামিউল আহমেদ :: পৃথিবীর কোথাও আমাদের মত বাজেট নিয়ে এত মাতামাতি হয়না। অন্যদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তার দেশের সরকার যেটা ভালো মনে করে বা যেটা ভালো হয় তাই করবে। তবে, যদি কোন কারণে মানুষে বিশ্বাসের জায়গায় অর্থাৎ তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তখন আবার তারা জেগে উঠে। অবশ্য সাধারণত এমন হয়না, যেহেতু উভয় পক্ষই সাবধান এবং সচেতন থাকে।

আমাদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটা। আমরা বাজেট প্রণয়ন থেকেই আস্তে আস্তে প্রস্তুতি নিতে থাকি এবং ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে একশনে চলে যাই। আর তখনই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা, লাঠিপেটা এমন কি টিয়ার গ্যাস ছুড়া। এভাবে কয়েকদিন হৈ-হুল্লোড় আর বাদানুবাদের পর উভয় পক্ষ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং অন্য কোন প্রসঙ্গ এসে বাজেট প্রসঙ্গকে আড়ালে পাঠিয়ে দেয়। তারপর আর কেউ কোন খুঁজ রাখেনা বাজেটের ভাগ্যে কি ঘটেছে।

অথচ ঐ খুঁজ না রাখার সময়টাই বাজেটের আসল ভাগ্য নির্ধারণ হয়। তখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পক্ষগুলো ঘুমিয়ে থাকে। আর এই সুযোগে আমলারা বসে বাজেট থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দকে নিজেদের মত করে মনের সুখে মাজারের শিরনি বিতরণের মত বিতরণ করে। এজন্য তারা পুর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন হেড বা খাতকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পচ্ছন্দ মত সব ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এতে অন্য কেউ দেখার বা জানার এমন কি কিছু করারও কিছু না থাকায় কাজটি তারা নির্বিঘ্নে করতে পারে। অর্থাৎ কোকিলরা অনেক কষ্টে ডিম পাড়ে আর কাকরা কোকিলদের অনুপস্থিতিতে আরামে বসে তা ভক্ষণ করে।

একই ধারার বাইরে নয় আমাদের প্রিয় পর্যটন। প্রতি বছর বাজেট প্রস্তাব হয়, হৈ-চৈ হয়, পাশও হয়। তখন বরাদ্দকৃত অর্থের অঙ্ক দেখে কখনো কদাচিৎ কোন শব্দ হয়; নাহয় বাজেটের বড় সাইজ দেখে সবাই শান্ত হয়ে যায়। ভাবে, টাকার অঙ্কতো কম নয়, অতএব মাশাল্লাহ। কিন্তু পরের খরব আর কেউ কিছুই জানেনা। তবে, বছরান্তে যখন দেখে শুনলাম কি আর পেলাম কি তখন একটু শব্দ করে আবার ঘুম ধরে। অথচ এই খবরটা জানেইনা বাজেট বরাদ্দের টাকাগুলো গেলো কোথায় অর্থাৎ কোন কোন কাকে মিলে এতটা ডিম সাবাড় করলো। তাহলে এতগুলো টাকা নাই হয়ে যাওয়ার মাজেজাটাইবা কি?

মাজেজাটা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে পর্যটনের নিজের নামে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। যে বাজেট বরাদ্দ হয় তা “বেসামরিমক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়” এর নামে হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহনের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন বিমান বন্দর নির্মান, উন্নয়ন, সংস্কার, বিমান ক্রয় ইত্যাদি খাতেই সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয়। বাকিটার মধ্যে থাকে মন্ত্রণালয়ের নিজের খরচের খাতগুলো। তা থেকে আমলাদের শিরনি বিতরণকালে পর্যটনের ভাগ্যে যা জুটে। যা মুল বাজেট বরাদ্দের কয়েক হাজার কোটি টাকার জায়গায় হয়তো কমবেশ একশো কোটি হতে পারে।

অথচ না জেনে না বুঝে আমরা হৈ-চৈ শুরু করে দেই। যেমনটি এবার অর্থাৎ ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে “বেসামরিম বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়” এর জন্য বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব হচ্ছে ২,৪৫৫ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিলো ৫,৬৯৫ কোটি টাকা। এতেই আমাদের সবাই ক্ষুদ্ধ, কিন্তু স্রেফ আগের মতই না জেনে না বুঝে। কেন না পর্যটনের জন্য বরাদ্দ যখন শতকোটি টাকার ঘরেই থাকে এবং আমলারাই তা নির্ধারন করে থাকেন তখন মোট বরাদ্দ আগে থেকে কমলেইবা কি আর বাড়লেইবা কি। এজন্য জানতে হবে পর্যটনের জন্য প্রকৃত বাজেট বরাদ্দ কত, হওয়ার কথা কত এবং এজন্য কি করতে হবে?

এই নিয়ে অর্থাৎ পর্যটনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে আমি বিগত দিনের প্রায় প্রত্যেক অর্থমন্ত্রীর সাথে দেনদরবার করেছি। তাদের প্রত্যেকের ছাফ কথা ছিলো বাজেট বরাদ্দের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাত থাকতে হবে, প্রাপ্ত অর্থ যথানিয়মে খরচ করতে হবে এবং যথা নিয়মে এই খরচের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু আপনি নিয়ম মেনে সুনিদ্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারেন না; অর্থ বরাদ্দ পেলে নিয়ম মত খরচ করতে পারেন না এবং খরচ করার পর নিয়মমত হিসাব দিতে পারেন না। এমতাবস্থায় আপনি বাজেট বরাদ্দ না পেলে আমাদের কি করার আছে। তাই নিয়ম মেনে আসুন পর্যটনের জন্য টাকার অভাব হবেনা।

তাহলে বিষয়টি কি আসলেই তাই? হ্যা, আসলেই তাই। আর এজন্য আমরা এবং বিশেষ করে যারা দায়িত্বে আছেন সেই আমলারাই দায়ী। কেন না পর্যটনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদে তথা চলতি অর্থবছরে কোন প্রকল্পে বা কোন বাবদে কত টাকার প্রয়োজন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব যাবে। তারপর প্রাপ্তি এবং খরচ শেষে যথা নিয়মে হিসাবের প্রয়োজন দেখা দিবে।

কিন্তু যদি পরিকল্পনাই না থাকে এবং খাত সুনির্দিষ্ট করে বাজেটের প্রস্তাব না রাখা যায় তাহলে বাজেট বরাদ্দ কি আকাশ থেকে আসবে। অতএব, অহেতুক চিল্লাপাল্লা না করে যা করার তাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পর্যটনের জন্য বাজেট বরাদ্দ সুনিদ্দিষ্ট এবং পর্যাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে। তাই এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের শুধু লোকদেখানো কিছু কাজ নিয়ে পড়ে না থেকে আসল কাজ করতে হবে। নাহয় যা সব সময় হচ্ছে তাই হতে থাকবে এবং কপাল পোড়া পর্যটনের ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হবেনা।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডিজ (সিটিএস)।