পরীক্ষামূলক প্রকাশনা | ঢাকা ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণঅধিকার পরিষদের ঐক্য(!) এবং গণমাধ্যমের অর্ধসত্য প্রচার: আজকের সংবাদ পর্যালোচনা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

জাকারিয়া পলাশ :: প্রায়ই সমালোচনা হয় যে, গণমাধ্যম সব সময় সত্য প্রকাশ করে না। অনেক গণমাধ্যম নিজেদের খুব দায়িত্বশীল বলে দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যায়, তারাও কোনো কোনো ইস্যুতে দায়সারা সংবাদ প্রচার করে। কখনও কখনও একপাক্ষিক সংবাদ প্রচার করে। কখনও অংশিক সত্য প্রচার করে।

গতকাল সংঘটিত একটি রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সংবাদ বিশ্লেষণ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। গণঅধিকার পরিষদ নামের রাজনৈতিক দল বেশ আলোচিত। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গঠিত এ দলটি ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছু বিরোধের সূত্র ধরে দুঅংশে ভাগ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে উভয় অংশকে নানাভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। অবশ্য ড. রেজা কিবরিয়ার অংশের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে মিয়া মশিউজ্জামান আহ্বায়ক হন। এরই মধ্যে দলটির নিবন্ধনের আবেদন বাতিলের ঘটনায় হাইকোর্ট-এ রিট মামলা দায়ের করেন মিয়া মশিউজ্জামান; যা চলমান আছে। ৫ আগস্টের পর নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন অংশ হঠাৎ করে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নামে নিবন্ধন পেয়ে যায়। অপর অংশের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা কোর্ট-এ বিচারাধীন রয়েছে।

গতকাল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন অংশ তাদের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এবং সেখানে অপর অংশের ‘সদস্য সচিব’ হিসেবে পরিচিত ফারুক হাসানসহ বেশ কিছু নেতাও অংশ নিয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ‘বিভেদ ভুলে গণঅধিকার পরিষদ এক হয়েছে।” এই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের ভিত্তিতেই সংবাদ পরিবেশন করে গণমাধ্যমগুলো।

যুগান্তর: সব ব্যবধান ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
দেশ রূপান্তর: বিভেদ ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদের দুই গ্রুপ।
আরটিভি অনলাইন: এক হলো গণঅধিকার পরিষদের বিভক্ত দুই গ্রুপ।
জনকণ্ঠ: বিভেদের অবসান: এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
মানবজমিন: ভেদাভেদ ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
শিরোনামগুলো এবং তার ভেতরের বর্ণনা পড়ে মনে হবে, উভয় গ্রুপ এক সঙ্গে এ ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছে। শুধুমাত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি-অনলাইনের শিরোনামে ”বিভেদ ভুলে এক হওয়ার” তথ্যটা নুরুল হক নুরের কোট হিসেবে প্রকাশ করে দায় সেরেছে। অর্থাৎ তারা ইঙ্গিত করেছে যে এটা একপক্ষের বক্তব্য।

আমার দেশের নিউজের শিরোনাম হলো, ”নুরের গণঅধিকারে ফিরলেন ফারুক”। এই শিরোনামটা সত্য। মূলত দুই অংশ এক হওয়ার তথ্য সঠিক না হলেও, এক অংশের সাবেক সদস্য সচিব ফারুক হাসান নুরের নেতৃত্বাধীন অংশে ফিরেছেন, এটা সত্য। কিন্তু আমার দেশও খবরের ভেতরের বক্তব্যে হুবহু সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যই প্রচার করেছে।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলে, এ দলের বিষয়ে গতকাল এবং তার আগের দিন ঘটে যাওয়া আরও কিছু তথ্য, গণমাধ্যমগুলো পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। ফলে প্রকৃতপক্ষে উভয় অংশ এক না হলেও মিডিয়া অনেকটা জোর করেই ঐক্য প্রতিষ্ঠার বয়ান প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে।

মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশকে, যেখানে ফারুক হাসান ছিলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে পুরোপুরি ”ওয়াফা থেকে বেওয়াফা” করে দিল মিডিয়া।
প্রকৃতপক্ষে, গণঅধিকার পরিষদের মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশ থেকে মো: ফারুক হাসান সাহেবকে অব্যহতি দেওয়া হয় এবং তিনি মো: নুরুল হক -এর অংশে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অন্য দিকে মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশ অ্যাড. শিরিন আক্তার শেলীকে সদস্য সচিব হিসেবে নিযুক্ত করে গতকালই। এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমগুলোতে পাঠানো হয়, যা সবগুলো সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট করেছে।
এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের নামে নিবন্ধন দাবি করে হাইকোর্ট-এ দাখিল করা মিয়া মশিউজ্জামান-এর রিট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেটিও নিষ্পত্তি হয়নি। এ প্রসঙ্গটিও গণমাধ্যম পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে।
অনেকে হয়তো বলবেন, এটাতো সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য থেকে লেখা হয়েছে। তাহলে সেটা শিরোনামেও থাকা উচিত। তাছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে একতরফা বক্তব্য আসলে, সেটা ক্রসচেক করা বা বিপরীত পক্ষের বক্তব্য যাচাই করা গণমাধ্যমে দায়িত্ব নয়? স্বাধীন দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমকে এই প্রশ্ন করতে হবে, পাঠকদের পক্ষ থেকে।

প্রশ্ন হলো, গণমাধ্যম এমনটা কেন করলো? পত্রিকাগুলোর কী স্বার্থ আছে যে, একটা পক্ষকে পুরোপুরি ইগনোর করার? আমার মনে হয়, কোনো বড় স্বার্থ ছাড়াই, শ্রেফ আহাম্মকির কারণে আমাদের গণমাধ্যমগুলো এমন আচরণ করে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গণঅধিকার পরিষদের ঐক্য(!) এবং গণমাধ্যমের অর্ধসত্য প্রচার: আজকের সংবাদ পর্যালোচনা

আপডেট সময় ০৪:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

জাকারিয়া পলাশ :: প্রায়ই সমালোচনা হয় যে, গণমাধ্যম সব সময় সত্য প্রকাশ করে না। অনেক গণমাধ্যম নিজেদের খুব দায়িত্বশীল বলে দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যায়, তারাও কোনো কোনো ইস্যুতে দায়সারা সংবাদ প্রচার করে। কখনও কখনও একপাক্ষিক সংবাদ প্রচার করে। কখনও অংশিক সত্য প্রচার করে।

গতকাল সংঘটিত একটি রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সংবাদ বিশ্লেষণ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। গণঅধিকার পরিষদ নামের রাজনৈতিক দল বেশ আলোচিত। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গঠিত এ দলটি ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছু বিরোধের সূত্র ধরে দুঅংশে ভাগ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে উভয় অংশকে নানাভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। অবশ্য ড. রেজা কিবরিয়ার অংশের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে মিয়া মশিউজ্জামান আহ্বায়ক হন। এরই মধ্যে দলটির নিবন্ধনের আবেদন বাতিলের ঘটনায় হাইকোর্ট-এ রিট মামলা দায়ের করেন মিয়া মশিউজ্জামান; যা চলমান আছে। ৫ আগস্টের পর নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন অংশ হঠাৎ করে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নামে নিবন্ধন পেয়ে যায়। অপর অংশের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা কোর্ট-এ বিচারাধীন রয়েছে।

গতকাল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন অংশ তাদের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এবং সেখানে অপর অংশের ‘সদস্য সচিব’ হিসেবে পরিচিত ফারুক হাসানসহ বেশ কিছু নেতাও অংশ নিয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ‘বিভেদ ভুলে গণঅধিকার পরিষদ এক হয়েছে।” এই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের ভিত্তিতেই সংবাদ পরিবেশন করে গণমাধ্যমগুলো।

যুগান্তর: সব ব্যবধান ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
দেশ রূপান্তর: বিভেদ ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদের দুই গ্রুপ।
আরটিভি অনলাইন: এক হলো গণঅধিকার পরিষদের বিভক্ত দুই গ্রুপ।
জনকণ্ঠ: বিভেদের অবসান: এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
মানবজমিন: ভেদাভেদ ভুলে এক হলো গণঅধিকার পরিষদ।
শিরোনামগুলো এবং তার ভেতরের বর্ণনা পড়ে মনে হবে, উভয় গ্রুপ এক সঙ্গে এ ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছে। শুধুমাত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি-অনলাইনের শিরোনামে ”বিভেদ ভুলে এক হওয়ার” তথ্যটা নুরুল হক নুরের কোট হিসেবে প্রকাশ করে দায় সেরেছে। অর্থাৎ তারা ইঙ্গিত করেছে যে এটা একপক্ষের বক্তব্য।

আমার দেশের নিউজের শিরোনাম হলো, ”নুরের গণঅধিকারে ফিরলেন ফারুক”। এই শিরোনামটা সত্য। মূলত দুই অংশ এক হওয়ার তথ্য সঠিক না হলেও, এক অংশের সাবেক সদস্য সচিব ফারুক হাসান নুরের নেতৃত্বাধীন অংশে ফিরেছেন, এটা সত্য। কিন্তু আমার দেশও খবরের ভেতরের বক্তব্যে হুবহু সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যই প্রচার করেছে।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলে, এ দলের বিষয়ে গতকাল এবং তার আগের দিন ঘটে যাওয়া আরও কিছু তথ্য, গণমাধ্যমগুলো পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। ফলে প্রকৃতপক্ষে উভয় অংশ এক না হলেও মিডিয়া অনেকটা জোর করেই ঐক্য প্রতিষ্ঠার বয়ান প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে।

মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশকে, যেখানে ফারুক হাসান ছিলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে পুরোপুরি ”ওয়াফা থেকে বেওয়াফা” করে দিল মিডিয়া।
প্রকৃতপক্ষে, গণঅধিকার পরিষদের মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশ থেকে মো: ফারুক হাসান সাহেবকে অব্যহতি দেওয়া হয় এবং তিনি মো: নুরুল হক -এর অংশে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অন্য দিকে মিয়া মশিউজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন অংশ অ্যাড. শিরিন আক্তার শেলীকে সদস্য সচিব হিসেবে নিযুক্ত করে গতকালই। এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমগুলোতে পাঠানো হয়, যা সবগুলো সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট করেছে।
এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের নামে নিবন্ধন দাবি করে হাইকোর্ট-এ দাখিল করা মিয়া মশিউজ্জামান-এর রিট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেটিও নিষ্পত্তি হয়নি। এ প্রসঙ্গটিও গণমাধ্যম পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে।
অনেকে হয়তো বলবেন, এটাতো সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য থেকে লেখা হয়েছে। তাহলে সেটা শিরোনামেও থাকা উচিত। তাছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে একতরফা বক্তব্য আসলে, সেটা ক্রসচেক করা বা বিপরীত পক্ষের বক্তব্য যাচাই করা গণমাধ্যমে দায়িত্ব নয়? স্বাধীন দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমকে এই প্রশ্ন করতে হবে, পাঠকদের পক্ষ থেকে।

প্রশ্ন হলো, গণমাধ্যম এমনটা কেন করলো? পত্রিকাগুলোর কী স্বার্থ আছে যে, একটা পক্ষকে পুরোপুরি ইগনোর করার? আমার মনে হয়, কোনো বড় স্বার্থ ছাড়াই, শ্রেফ আহাম্মকির কারণে আমাদের গণমাধ্যমগুলো এমন আচরণ করে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464