শফিকুল হক : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ কখনোই সম্পূর্ণভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুবার নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণে এই প্রভাব প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কার্যকর থেকেছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক ব্যতিক্রম দেখছে—একটি সার্বভৌম, আত্মবিশ্বাসী ও ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
এই সরকার দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে এককভাবে জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে পরিচালনা করছে, যা আগে ছিল নানা আঞ্চলিক চাপের মধ্যে আপোষকামী। ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেও বাংলাদেশ এখন সরাসরি, স্পষ্ট এবং নীতিনিষ্ঠ অবস্থান নিচ্ছে সীমান্ত, পানি বণ্টন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ইস্যুতে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—দূরদর্শী ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব থাকলে এই দেশ নিজেই নিজেকে পরিচালনা করতে সক্ষম। শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, এই সরকার একটি নতুন রাজনৈতিক মানসিকতা ও পররাষ্ট্রনীতির দর্শন উপস্থাপন করছে, যেখানে কোনো বড় রাষ্ট্রের ছায়া বা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
এই মুহূর্তটি বাংলাদেশের জন্য একটি নৈতিক ও কৌশলগত জাগরণ। এটি দেখিয়ে দিচ্ছে—আঞ্চলিক শক্তির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে আত্মনির্ভর-ভাবে পথ চলা সম্ভব। এ অভিজ্ঞতা যদি দীর্ঘমেয়াদে রক্ষা করা যায়, তবে এটি হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও প্রকৃত স্বাধীনতার পথচলা।
সাবেক মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটস
সলিসিটর ও আইনজীবী