ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মব সৃষ্টি করে পুলিশ সদস্যকে পেটালেন রিকশাচালকরা একজন প্রাথমিক শিক্ষকের স্বরূপ : বাস্তবতা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব আবুধাবিতে লটারিতে ২০ মিলিয়ন দিরহাম জিতলেন বাংলাদেশি হারুন প্যারিসে জাতীয়তাবাদী ঐক্য ফোরাম ফ্রান্স, বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার কর্মী সভা সম্পন্ন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব: ২০২৬ নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করার একটি পথ এবার জেন জি বিক্ষোভে উত্তাল আফ্রিকার আরেক দেশ বাবার রাজকন্যা আবু খালেদ পাঠান সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সৈয়দ কামরুল হাসান ও গোলাম শফিক খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সহিংসতা নিয়ে যা বলছে সেনাবাহিনী নবীগঞ্জ-বাহুবলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে ঢাকায় মানববন্ধন

একজন প্রাথমিক শিক্ষকের স্বরূপ : বাস্তবতা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব

রিফাত আরা রিফা :প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির ভিত্তি নির্মাণের প্রথম ধাপ। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের মনে জীবন-চলাচলের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, মূল্যবোধ ও দক্ষতার বীজ রোপণ করেন যিনি, তিনিই প্রাথমিক শিক্ষক। তাই একজন আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষক কেবল শিক্ষার্থীর নয়, সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষক শুধুই পাঠদানকারী নন, তিনি একজন আদর্শ নাগরিক নির্মাতা। একজন প্রাথমিক শিক্ষককে হতে হবে ধৈর্যশীল, মমতাময় এবং শিশুবান্ধব। শিশুদের মানসিক জগৎ ও আবেগ বোঝার ক্ষমতা তাঁর থাকতে হবে। কারণ, এই স্তরের শিশুরাই প্রথমবারের মতো শিক্ষার স্বাদ পায়। শিক্ষক যদি তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ না করেন, তবে তারা সহজেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

একজন প্রাথমিক শিক্ষককে হতে হবে দক্ষ, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনশীল। শিশুরা খেলতে ভালোবাসে, গল্প শুনতে ভালোবাসে, রঙ ও ছবির মাধ্যমে শিখতে ভালোবাসে। তাই একজন ভালো শিক্ষককে অবশ্যই পাঠদান পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যাতে শিক্ষা আনন্দময় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শিশুর উপযোগীভাবে পাঠ্যবিষয় উপস্থাপন করাই তাঁর অন্যতম দায়িত্ব।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়াও একজন প্রাথমিক শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে—তাই শিক্ষককে হতে হবে সততা, দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও মানবিক গুণাবলির উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষক নিজে যেসব গুণ ধারণ করবেন, শিক্ষার্থীরাও তা অনুসরণ করবে।

সমাজের প্রত্যেকের উচিত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাঁদের মতামতের মূল্য দেওয়া। শিক্ষক যেন তাঁর কাজের যথাযথ মর্যাদা পান, তা নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন, চাকরির নিরাপত্তা, পদোন্নতি, পেনশন, চিকিৎসা সুবিধা ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে তারা আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে পারেন। বিদ্যালয়েও থাকা উচিত পর্যাপ্ত অবকাঠামো, পাঠ্যবই, প্রযুক্তি, টেকসই শ্রেণিকক্ষ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা।

সবশেষে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবো—একজন আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষক কেবল শিশুর মস্তিষ্কে জ্ঞানের আলো জ্বালান না, তিনি তাদের হৃদয়েও স্থান করে নেন। তাঁর হাত ধরেই শিশুরা প্রথম শিখে, প্রথম স্বপ্ন দেখে, এবং ধীরে ধীরে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

তাই প্রাথমিক শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র একটি চাকরি হিসেবে নয়, বরং একটি মহান দায়িত্ব ও মানবসেবার পেশা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আর তাঁদের যথাযথ সুযোগ, সম্মান ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায়িত্ব।

পরামর্শদাতা : এলাহো অটিজম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইউএসএ

ট্যাগস :

মব সৃষ্টি করে পুলিশ সদস্যকে পেটালেন রিকশাচালকরা

একজন প্রাথমিক শিক্ষকের স্বরূপ : বাস্তবতা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব

আপডেট সময় ১১:৪৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

রিফাত আরা রিফা :প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির ভিত্তি নির্মাণের প্রথম ধাপ। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের মনে জীবন-চলাচলের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, মূল্যবোধ ও দক্ষতার বীজ রোপণ করেন যিনি, তিনিই প্রাথমিক শিক্ষক। তাই একজন আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষক কেবল শিক্ষার্থীর নয়, সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষক শুধুই পাঠদানকারী নন, তিনি একজন আদর্শ নাগরিক নির্মাতা। একজন প্রাথমিক শিক্ষককে হতে হবে ধৈর্যশীল, মমতাময় এবং শিশুবান্ধব। শিশুদের মানসিক জগৎ ও আবেগ বোঝার ক্ষমতা তাঁর থাকতে হবে। কারণ, এই স্তরের শিশুরাই প্রথমবারের মতো শিক্ষার স্বাদ পায়। শিক্ষক যদি তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ না করেন, তবে তারা সহজেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

একজন প্রাথমিক শিক্ষককে হতে হবে দক্ষ, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনশীল। শিশুরা খেলতে ভালোবাসে, গল্প শুনতে ভালোবাসে, রঙ ও ছবির মাধ্যমে শিখতে ভালোবাসে। তাই একজন ভালো শিক্ষককে অবশ্যই পাঠদান পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যাতে শিক্ষা আনন্দময় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শিশুর উপযোগীভাবে পাঠ্যবিষয় উপস্থাপন করাই তাঁর অন্যতম দায়িত্ব।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়াও একজন প্রাথমিক শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে—তাই শিক্ষককে হতে হবে সততা, দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও মানবিক গুণাবলির উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষক নিজে যেসব গুণ ধারণ করবেন, শিক্ষার্থীরাও তা অনুসরণ করবে।

সমাজের প্রত্যেকের উচিত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাঁদের মতামতের মূল্য দেওয়া। শিক্ষক যেন তাঁর কাজের যথাযথ মর্যাদা পান, তা নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন, চাকরির নিরাপত্তা, পদোন্নতি, পেনশন, চিকিৎসা সুবিধা ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে তারা আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে পারেন। বিদ্যালয়েও থাকা উচিত পর্যাপ্ত অবকাঠামো, পাঠ্যবই, প্রযুক্তি, টেকসই শ্রেণিকক্ষ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা।

সবশেষে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবো—একজন আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষক কেবল শিশুর মস্তিষ্কে জ্ঞানের আলো জ্বালান না, তিনি তাদের হৃদয়েও স্থান করে নেন। তাঁর হাত ধরেই শিশুরা প্রথম শিখে, প্রথম স্বপ্ন দেখে, এবং ধীরে ধীরে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

তাই প্রাথমিক শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র একটি চাকরি হিসেবে নয়, বরং একটি মহান দায়িত্ব ও মানবসেবার পেশা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আর তাঁদের যথাযথ সুযোগ, সম্মান ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায়িত্ব।

পরামর্শদাতা : এলাহো অটিজম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইউএসএ


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471