হরেক দেশের হরেক রকম খাবার, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, শিল্পকর্ম প্রদর্শন ও পণ্য বেচাকেনার উন্মুক্ত বাজার বসেছে দুবাইয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল ভিলেজের প্রায় ছয় মাসব্যাপী শীতকালীন এই মেলা শুরু হয়েছে গত অক্টোবরে। চলতি বছরের ২৯তম আসর গড়াবে আগামী বছরের ১১ মে পর্যন্ত।
এবার মেলায় রয়েছে ৩০টি প্যাভিলিয়ন। এর মধ্যে নতুন সংযোজন হয়েছে, ইরাক, জর্ডান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। তবে এখানে বাংলাদেশ কেবল ‘নামমাত্র’ পরিচয় বহন করছে। সরকারি কিংবা সরাসরি বাণিজ্যিক অংশগ্রহণ না থাকলেও শ্রীলঙ্কান আয়োজকদের কল্যাণে মেলায় কেবল নাম তোলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কান আয়োজকরা বলছেন, দুই দেশের জনপ্রিয় পণ্যগুলো বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করেছেন তারা।
দেশটিতে গ্লোবাল ভিলেজের এই আয়োজনকে শীতকালীন সবচেয়ে বড় শপিং ফেস্টিভ্যাল হিসেবে ধরা হয়। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বৈশ্বিক বাজারে নিজস্ব পণ্য প্রদর্শনী ও সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ পান। প্রতিবছর এখানে লাখো পর্যটক ও স্থানীয়রা ভিড় জমান। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি একটি বড় আন্তর্জাতিক গন্তব্য। যা একেকটি দেশের সঙ্গে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন, থিম পার্ক, শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন আর খাবারের স্টল মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। ভিন্ন ভিন্ন প্যাভিলিয়নে স্টল ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশি কিছু ব্যবসায়ী। এদের অনেকে প্রতিবছর এই মেলায় অংশ নেন। তাদের দাবি, বৈশ্বিক এই আয়োজনে দেশের পণ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য গ্লোবাল ভিলেজ হতে পারে অন্যতম মাধ্যম।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি এসব উদ্যোক্তারা বলেন, ভিনদেশি আয়োজকদের থেকে স্টল ভাড়া নিতে গিয়ে চড়া মূল্য দিতে হয়। আমরা আশা করব, আগামীতে বাংলাদেশি আয়োজকরা দেশের নামে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নেবেন। যেখানে সাশ্রয়ী দামে স্টল ভাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের আয়োজক রাধা সুধাকরন বলেন, গ্লোবাল ভিলেজে সব দেশের অংশগ্রহণ থাকলেও বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নাম ছিল না। তাই এই দুই দেশের জনপ্রিয় পণ্যগুলো বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের কাপড়ের মান অনেক ভালো। বিশেষ করে লিলেন কাপড়। শুধু কাপড়ই নয়, যেকোনো বাংলাদেশি পণ্য এই মেলায় প্রদর্শনের সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এই মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দেশীয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ ও অধিক মনোযোগ চান বাংলাদেশ মিশন। এ বিষয়ে দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মো. রাশেদুজ্জামান জানান, গ্লোবাল ভিলেজে বাংলাদেশের যেসব স্টল রয়েছে, সেগুলো সরকার কিংবা বাংলাদেশের আয়োজকদের মাধ্যমে করা হয়নি। অন্য একটি দেশের প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সেখানে অংশ নিয়েছেন।
কনসাল জেনারেল বলেন, ইতোপূর্বে রাষ্ট্রদূত গ্লোবাল ভিলেজের কার্যক্রম সম্পর্কে ঢাকায় জানিয়েছেন। এখানে সরকার অংশগ্রহণ করবে না তবে মিশনের কাজ হবে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করা। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।
শীতকালীন এই মেলা প্রতিদিন বিকাল ৪টায় দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গত আসরে প্রায় ১ কোটি দর্শকের রেকর্ড গড়েছিল গ্লোবাল ভিলেজ। ( সমকাল )