পরীক্ষামূলক প্রকাশনা | ঢাকা ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহজেই দুবাই ভ্রমণ: কীভাবে ভিসা পাবেন ও কী দেখবেন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:৪৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

Print

নাজমা জাহান নাজু : মধ্য প্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহর ঘুরে আসার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। অসাধারণ আর্কিটেকচার, মনোরম শপিং মল, এবং দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থানগুলো দুবাইকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করেছে। কিন্তু কীভাবে সহজে ভিসা পাবেন এবং দুবাই ঘুরে আসবেন, তা অনেকেরই অজানা। এই লেখায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দুবাই ভিসা সংক্রান্ত তথ্য:
১. ভিসার প্রকারভেদ:

দুবাইতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা পাওয়া যায়, যেগুলো ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান ভিসা প্রকারভেদগুলো হলো:

টুরিস্ট ভিসা: যারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভ্রমণ করতে চান, সাধারণত ৩০ বা ৯০ দিনের জন্য এই ভিসা ইস্যু করা হয়।
বিজনেস ভিসা: ব্যবসায়িক কাজে দুবাইতে আসতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য।
ওয়ার্ক ভিসা: দুবাইতে কাজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য, যা কোনো স্পন্সর বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
রেসিডেন্স ভিসা: যারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান বা দুবাইতে ব্যবসা শুরু করতে চান, তাদের জন্য।

২. ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:

দুবাইতে ভিসা পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

আবেদন প্রক্রিয়া: ভিসার জন্য অনলাইন বা সরাসরি আবেদন করতে হয়। নিয়োগকর্তা বা ভ্রমণ এজেন্সি সাধারণত আবেদন করে থাকে।

আবশ্যক দলিলপত্র: পাসপোর্টের কপি, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্পন্সরের কাগজপত্র, বিমান টিকিটের কপি ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
প্রক্রিয়াকরণের সময়: সাধারণত ৩-৭ কার্যদিবসের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

৩. ভিসার ফি:

ভিসার প্রকার ও মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ফি ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ:

৩০ দিনের টুরিস্ট ভিসার জন্য ফি প্রায় ৩৫০-৪০০ দিরহাম।
দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য খরচ আরও বেশি হতে পারে।

৪. নতুন নিয়মাবলী (২০২৪):

দুবাইয়ে নতুন ভিসা নিয়মাবলী অনুযায়ী:

গোল্ডেন ভিসা: উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন চাকুরিজীবী, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, বা শিক্ষার্থীরা ৫-১০ বছরের মেয়াদী এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
গ্রিন ভিসা: উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন নিয়মে ৫ বছরের রেসিডেন্স ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।

৫. নির্দেশিকা:

ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবশ্যই নবায়ন করতে হবে।
ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হলে জরিমানা প্রদান করতে হবে।

দুবাইতে ভ্রমণের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

৬. বিমান ভ্রমণ:

দুবাইয়ের জন্য সরাসরি বা সংযোগ ফ্লাইট পরিচালনা করে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স। কিছু প্রধান এয়ারলাইন্স হলো:

এমিরেটস এয়ারলাইন্স: দুবাইয়ের নিজস্ব এয়ারলাইন্স, যা সারা বিশ্বে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এতিহাদ, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কি এয়ারলাইন্স: অন্যান্য জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স।

৭. আবাসন ব্যবস্থা:

দুবাইতে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন বাজেটের আবাসন ব্যবস্থা পাওয়া যায়:

বাজেট হোটেল: কম খরচে হোস্টেল ও ২-৩ তারকা হোটেল।
মিড-রেঞ্জ হোটেল: যারা আরামদায়ক থাকার অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য ৩-৪ তারকা হোটেল।
লাক্সারি হোটেল: বিলাসবহুল হোটেল যেমন বুর্জ আল আরব, আটলান্টিস দ্য পাম ইত্যাদি।

৮. স্থানীয় যাতায়াত:

দুবাইতে চলাফেরার জন্য সুবিধাজনক কিছু মাধ্যম হলো:

মেট্রো: দুবাই মেট্রো দ্রুত এবং সাশ্রয়ী যাতায়াত ব্যবস্থা।
ট্যাক্সি: দুবাইয়ের সরকারি ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি যেমন উবার ও করিম।
বাস ও ভাড়া গাড়ি: স্থানীয় বাস এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করেও ঘুরে দেখা যায়।

৯. দর্শনীয় স্থান:

দুবাইতে কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হলো:

বুর্জ খলিফা: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার।
দুবাই মল: বিলাসবহুল শপিং ও বিনোদন কেন্দ্র।
ডেজার্ট সাফারি ও দুবাই ক্রিক: ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও মরুভূমি অভিজ্ঞতা।

১০. কেনাকাটা ও বাজার:

গোল্ড সুক ও স্পাইস সুক: ঐতিহ্যবাহী সোনা ও মসলার বাজার।
দুবাই মল ও মল অব আমিরাত: বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের কেনাকাটা কেন্দ্র।

১১. ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়:

দুবাই ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টি সবচেয়ে আরামদায়ক, কারণ এই সময় আবহাওয়া শীতল থাকে।

১২. সতর্কতা ও নিরাপত্তা:

দুবাই সাধারণত পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:

ড্রেস কোড: পাবলিক প্লেসে শালীন পোশাক পরা উচিত।
নিরাপত্তা: ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখা ও স্থানীয় নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

এই নিবন্ধে দুবাই ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা তথ্য থেকে শুরু করে ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা পর্যন্ত সবকিছুই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। আশা করা যায়, এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই দুবাই ভ্রমণ করতে পারবেন।

ট্যাগস :

কুয়ালালামপুরে ১১ বাংলাদেশিসহ আটক ৩২ অভিবাসী

সহজেই দুবাই ভ্রমণ: কীভাবে ভিসা পাবেন ও কী দেখবেন

আপডেট সময় ০২:৪৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নাজমা জাহান নাজু : মধ্য প্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহর ঘুরে আসার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। অসাধারণ আর্কিটেকচার, মনোরম শপিং মল, এবং দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থানগুলো দুবাইকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করেছে। কিন্তু কীভাবে সহজে ভিসা পাবেন এবং দুবাই ঘুরে আসবেন, তা অনেকেরই অজানা। এই লেখায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দুবাই ভিসা সংক্রান্ত তথ্য:
১. ভিসার প্রকারভেদ:

দুবাইতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা পাওয়া যায়, যেগুলো ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান ভিসা প্রকারভেদগুলো হলো:

টুরিস্ট ভিসা: যারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভ্রমণ করতে চান, সাধারণত ৩০ বা ৯০ দিনের জন্য এই ভিসা ইস্যু করা হয়।
বিজনেস ভিসা: ব্যবসায়িক কাজে দুবাইতে আসতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য।
ওয়ার্ক ভিসা: দুবাইতে কাজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য, যা কোনো স্পন্সর বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
রেসিডেন্স ভিসা: যারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান বা দুবাইতে ব্যবসা শুরু করতে চান, তাদের জন্য।

২. ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:

দুবাইতে ভিসা পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

আবেদন প্রক্রিয়া: ভিসার জন্য অনলাইন বা সরাসরি আবেদন করতে হয়। নিয়োগকর্তা বা ভ্রমণ এজেন্সি সাধারণত আবেদন করে থাকে।

আবশ্যক দলিলপত্র: পাসপোর্টের কপি, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্পন্সরের কাগজপত্র, বিমান টিকিটের কপি ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
প্রক্রিয়াকরণের সময়: সাধারণত ৩-৭ কার্যদিবসের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

৩. ভিসার ফি:

ভিসার প্রকার ও মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ফি ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ:

৩০ দিনের টুরিস্ট ভিসার জন্য ফি প্রায় ৩৫০-৪০০ দিরহাম।
দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য খরচ আরও বেশি হতে পারে।

৪. নতুন নিয়মাবলী (২০২৪):

দুবাইয়ে নতুন ভিসা নিয়মাবলী অনুযায়ী:

গোল্ডেন ভিসা: উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন চাকুরিজীবী, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, বা শিক্ষার্থীরা ৫-১০ বছরের মেয়াদী এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
গ্রিন ভিসা: উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন নিয়মে ৫ বছরের রেসিডেন্স ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।

৫. নির্দেশিকা:

ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবশ্যই নবায়ন করতে হবে।
ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হলে জরিমানা প্রদান করতে হবে।

দুবাইতে ভ্রমণের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

৬. বিমান ভ্রমণ:

দুবাইয়ের জন্য সরাসরি বা সংযোগ ফ্লাইট পরিচালনা করে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স। কিছু প্রধান এয়ারলাইন্স হলো:

এমিরেটস এয়ারলাইন্স: দুবাইয়ের নিজস্ব এয়ারলাইন্স, যা সারা বিশ্বে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এতিহাদ, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কি এয়ারলাইন্স: অন্যান্য জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স।

৭. আবাসন ব্যবস্থা:

দুবাইতে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন বাজেটের আবাসন ব্যবস্থা পাওয়া যায়:

বাজেট হোটেল: কম খরচে হোস্টেল ও ২-৩ তারকা হোটেল।
মিড-রেঞ্জ হোটেল: যারা আরামদায়ক থাকার অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য ৩-৪ তারকা হোটেল।
লাক্সারি হোটেল: বিলাসবহুল হোটেল যেমন বুর্জ আল আরব, আটলান্টিস দ্য পাম ইত্যাদি।

৮. স্থানীয় যাতায়াত:

দুবাইতে চলাফেরার জন্য সুবিধাজনক কিছু মাধ্যম হলো:

মেট্রো: দুবাই মেট্রো দ্রুত এবং সাশ্রয়ী যাতায়াত ব্যবস্থা।
ট্যাক্সি: দুবাইয়ের সরকারি ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি যেমন উবার ও করিম।
বাস ও ভাড়া গাড়ি: স্থানীয় বাস এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করেও ঘুরে দেখা যায়।

৯. দর্শনীয় স্থান:

দুবাইতে কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হলো:

বুর্জ খলিফা: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার।
দুবাই মল: বিলাসবহুল শপিং ও বিনোদন কেন্দ্র।
ডেজার্ট সাফারি ও দুবাই ক্রিক: ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও মরুভূমি অভিজ্ঞতা।

১০. কেনাকাটা ও বাজার:

গোল্ড সুক ও স্পাইস সুক: ঐতিহ্যবাহী সোনা ও মসলার বাজার।
দুবাই মল ও মল অব আমিরাত: বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের কেনাকাটা কেন্দ্র।

১১. ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়:

দুবাই ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টি সবচেয়ে আরামদায়ক, কারণ এই সময় আবহাওয়া শীতল থাকে।

১২. সতর্কতা ও নিরাপত্তা:

দুবাই সাধারণত পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:

ড্রেস কোড: পাবলিক প্লেসে শালীন পোশাক পরা উচিত।
নিরাপত্তা: ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখা ও স্থানীয় নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

এই নিবন্ধে দুবাই ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা তথ্য থেকে শুরু করে ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা পর্যন্ত সবকিছুই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। আশা করা যায়, এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই দুবাই ভ্রমণ করতে পারবেন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464