ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সিলেটের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দীপংকর দাস দ্বীপ আর নেই প্যারিসে কবিতা-সুর ও চিত্রে Festival Terres du Bengale সম্পন্ন লন্ডনে বড়লেখা ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’র আয়োজনে জমজমাট ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত অনশন ভাঙিয়ে আমজনতার তারেককে হাসপাতালে পাঠালেন সালাহউদ্দিন সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি সোমবার স্থগিত নাট্যসংঘ কানাডার চতুর্থ নাট্যোৎসব ৮-৯ নভেম্বর পর্তুগালের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি খুন ওসমানীনগরে গণঅধিকার পরিষদের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ ওসমানীনগর ফুটবল দলের সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়: আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি মুখোমুখি

প্যারিসে কবিতা-সুর ও চিত্রে Festival Terres du Bengale সম্পন্ন

প্যারিস  প্রতিনিধি :বাঙালির হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত কেন্দ্র করে শিল্প-সংস্কৃতির তীর্থভূমি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী— ‘বাংলার মাটির উৎসব (Festival Terres du Bengale)’।

৮ ও ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের
‘লা কামিলিয়েন’ হলে আয়োজিত এই অনন্য উৎসবের আয়োজন করে Terres du Bengale, Association FranceKriti, Multidimension এবং Terra Incognita।

উৎসবের মূল লক্ষ্য ছিল ফ্রান্স ও বাংলার সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা এবং চলচ্চিত্র, সংগীত ও কবিতার মাধ্যমে বাংলা ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে তুলে ধরা। দুই দিনব্যাপী আয়োজনে প্যারিসের আকাশে মিশে ছিল বাংলা গানের সুর, কবিতার আবেগ আর স্বাধীনতার গল্পে ভরা প্রামাণ্যচিত্রের আলোছায়া।
উৎসবের প্রথম দিন, শনিবার (৮ নভেম্বর), প্রদর্শিত হয় তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র—“Color of Freedom” (পরিচালনা: অজয় রায়), “Bangladesh, naissance d’un drapeau” (পরিচালনা: প্রকাশ রায়), এবং “Bonobibbi, la femme de la forêt” (পরিচালনা: সৌরভ ব্যানার্জি ও অন্নু জলাল)।

রবিবারের (৯ নভেম্বর) প্রদর্শনীও ছিল সমান সমৃদ্ধ। পর্দায় আসে—“Le chant des fous” (পরিচালনা: জর্জ লুমো), “Mon Pabaner Nao” (পরিচালনা: লাডলি মুখোপাধ্যায়), “The 1971 War in the Eyes of Pakistanis” (পরিচালনা: আমিরুল আরহাম), এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “Rêve d’un instant” (পরিচালনা: অরুণ হালদার)।

প্রতিটি প্রদর্শনীর পর দর্শকরা অংশ নেন প্রাণবন্ত আলোচনা পর্বে, যেখানে নির্মাতারা তাঁদের চিন্তা, প্রেরণা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন দর্শকদের সঙ্গে।
শনিবার রাতের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যেন পরিণত হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর বাঙালিয়ানা উৎসবে। সংগীত ও আবৃত্তির মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় ভরে ওঠে পুরো হল।
দু’দিনব্যাপি আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শর্মীলা রায়, পবন দাস বাউল, মৌসুমী চক্রবর্তী ও আরিফ রানা। কীর্তন পরিবেশন করেন দেবোনীলা ঘোষ। সাংস্কৃতিক পর্বে তবলায় ছিলেন অনুভব অনুভব চ্যাটার্জি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন অর্পিতা রায়, এবং ফ্রান্স কৃতি (France Kriti) সংস্থার পক্ষে জেরেমি কদ্রন, আবু বকর আল আমিন, নিনা কাবানো এবং জান্নাতুল নাঈম প্রীতি।

বাংলা সংগীতের সুর, কবিতার ভাষা ও স্বাধীনতার স্মৃতিচারণে সেদিন প্যারিসের বাতাস ভরে ওঠে এক অদ্ভুত আবেগে—যেন দূরদেশে বসেও বাংলার মাটি ও মানুষের গন্ধ ছুঁয়ে যায় শ্রোতাদের হৃদয়।
বিশেষ করে ফ্রান্সপ্রবাসী প্রথিতযশা বাঙালি কণ্ঠশিল্পী শর্মীলা রায়-এর অনবদ্য পরিবেশনা ছিল অসাধারণ।
উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি মঞ্চাভিনেতা সোয়েব মোজাম্মেল বলেন- ‘ভাষা, দেশ কিংবা সীমান্ত নয়, কেবল সংস্কৃতিই পারে মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রাখতে।’ তিনি বলেন, ফরাসিদের পাশাপাশি ফ্রান্সে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালি কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে এরকম আয়োজন নিয়মিত করা খুবই দরকার।

উৎসবের সমাপনীতে আয়োজকরা জানান—
‘বাংলা ভাষা, সংগীত, চলচ্চিত্র ও সাহিত্য বিশ্বদরবারে আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েই মূলতঃ ‘বাংলার মাটির উৎসব (Festival Terres du Bengale)’ এ আয়োজন।’ তাঁদের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ ফ্রান্সে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও ভালোবাসাকে আরও দৃঢ় করবে, পাশাপাশি ফরাসি সংস্কৃতির মাঝে আলাদা একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।

ট্যাগস :

সিলেটের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দীপংকর দাস দ্বীপ আর নেই

প্যারিসে কবিতা-সুর ও চিত্রে Festival Terres du Bengale সম্পন্ন

আপডেট সময় ০১:৫৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

প্যারিস  প্রতিনিধি :বাঙালির হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত কেন্দ্র করে শিল্প-সংস্কৃতির তীর্থভূমি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী— ‘বাংলার মাটির উৎসব (Festival Terres du Bengale)’।

৮ ও ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের
‘লা কামিলিয়েন’ হলে আয়োজিত এই অনন্য উৎসবের আয়োজন করে Terres du Bengale, Association FranceKriti, Multidimension এবং Terra Incognita।

উৎসবের মূল লক্ষ্য ছিল ফ্রান্স ও বাংলার সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা এবং চলচ্চিত্র, সংগীত ও কবিতার মাধ্যমে বাংলা ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে তুলে ধরা। দুই দিনব্যাপী আয়োজনে প্যারিসের আকাশে মিশে ছিল বাংলা গানের সুর, কবিতার আবেগ আর স্বাধীনতার গল্পে ভরা প্রামাণ্যচিত্রের আলোছায়া।
উৎসবের প্রথম দিন, শনিবার (৮ নভেম্বর), প্রদর্শিত হয় তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র—“Color of Freedom” (পরিচালনা: অজয় রায়), “Bangladesh, naissance d’un drapeau” (পরিচালনা: প্রকাশ রায়), এবং “Bonobibbi, la femme de la forêt” (পরিচালনা: সৌরভ ব্যানার্জি ও অন্নু জলাল)।

রবিবারের (৯ নভেম্বর) প্রদর্শনীও ছিল সমান সমৃদ্ধ। পর্দায় আসে—“Le chant des fous” (পরিচালনা: জর্জ লুমো), “Mon Pabaner Nao” (পরিচালনা: লাডলি মুখোপাধ্যায়), “The 1971 War in the Eyes of Pakistanis” (পরিচালনা: আমিরুল আরহাম), এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “Rêve d’un instant” (পরিচালনা: অরুণ হালদার)।

প্রতিটি প্রদর্শনীর পর দর্শকরা অংশ নেন প্রাণবন্ত আলোচনা পর্বে, যেখানে নির্মাতারা তাঁদের চিন্তা, প্রেরণা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন দর্শকদের সঙ্গে।
শনিবার রাতের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যেন পরিণত হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর বাঙালিয়ানা উৎসবে। সংগীত ও আবৃত্তির মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় ভরে ওঠে পুরো হল।
দু’দিনব্যাপি আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শর্মীলা রায়, পবন দাস বাউল, মৌসুমী চক্রবর্তী ও আরিফ রানা। কীর্তন পরিবেশন করেন দেবোনীলা ঘোষ। সাংস্কৃতিক পর্বে তবলায় ছিলেন অনুভব অনুভব চ্যাটার্জি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন অর্পিতা রায়, এবং ফ্রান্স কৃতি (France Kriti) সংস্থার পক্ষে জেরেমি কদ্রন, আবু বকর আল আমিন, নিনা কাবানো এবং জান্নাতুল নাঈম প্রীতি।

বাংলা সংগীতের সুর, কবিতার ভাষা ও স্বাধীনতার স্মৃতিচারণে সেদিন প্যারিসের বাতাস ভরে ওঠে এক অদ্ভুত আবেগে—যেন দূরদেশে বসেও বাংলার মাটি ও মানুষের গন্ধ ছুঁয়ে যায় শ্রোতাদের হৃদয়।
বিশেষ করে ফ্রান্সপ্রবাসী প্রথিতযশা বাঙালি কণ্ঠশিল্পী শর্মীলা রায়-এর অনবদ্য পরিবেশনা ছিল অসাধারণ।
উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি মঞ্চাভিনেতা সোয়েব মোজাম্মেল বলেন- ‘ভাষা, দেশ কিংবা সীমান্ত নয়, কেবল সংস্কৃতিই পারে মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রাখতে।’ তিনি বলেন, ফরাসিদের পাশাপাশি ফ্রান্সে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালি কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে এরকম আয়োজন নিয়মিত করা খুবই দরকার।

উৎসবের সমাপনীতে আয়োজকরা জানান—
‘বাংলা ভাষা, সংগীত, চলচ্চিত্র ও সাহিত্য বিশ্বদরবারে আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েই মূলতঃ ‘বাংলার মাটির উৎসব (Festival Terres du Bengale)’ এ আয়োজন।’ তাঁদের বিশ্বাস, এই উদ্যোগ ফ্রান্সে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও ভালোবাসাকে আরও দৃঢ় করবে, পাশাপাশি ফরাসি সংস্কৃতির মাঝে আলাদা একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।