ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলের দম্ভচূর্ণ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:২৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

অভিবাসন ডেস্ক :: যত গর্জে তত বর্ষে না। ‘অকালপক্ব’ মেঘের মতো ‘আকাশ কাঁপানো’ হাঁকডাক ছেড়ে দু-কদমেই দম ফুরিয়ে যায় যে ঘোড়ার-জাত বেদুইনরা তাকে ‘ভেড়া’ বলেই টিটকারি-মশকরা করে বলে শুনেছি!

মার্কিন অক্সিজেনে হালুম-হুলুম গর্জন ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের রক্তখেকো দানব ইসরাইলের দশা এখন সেরকমই। হাওয়া তুলে নিজেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মরুর উত্তাল বালুঝড়ে। মাত্র ১২ দিনেই কুপোকাত। পায়ের দৌড় শেষ। নতজানু হয়ে ছুটে গিয়েছে ‘মুনিবের (যুক্তরাষ্ট্র) দরবারে’।

‘ত্রাহি ত্রাহি’ অবস্থা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধামাকায়। পশ্চিমা তেজ ধার করে শান্ত মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির বিষ ঢেলে নিরস্ত্র-নিরীহ জনপদের যমদূত হয়ে ওঠা ইসরাইলের এবার ভালো শিক্ষাই হয়েছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে গত ৬ দশকের দম্ভ।

মধ্যপ্রাচ্যে আমিই রাজা-খামেনির ‘চোয়াল কাঁপা’ চপেটাঘাতে বেয়াড়া সেই ভূত এবার পালিয়েছে নেতানিয়াহুর। লম্ফঝম্প শেষ। এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ ধ্যানে বসেছে হোয়াইট হাউজের ‘বটতলায়’।

প্রযুক্তি সূতিকাগার তেল আবিব, সর্বাধুনিক নৌশক্তিতে ঘেরা বাণিজ্যিক মেরুদণ্ড বন্দর নগরী হাইফা, বিশ্বসেরা গোয়েন্দার তকমাধারী মোসাদের সদর দপ্তর, নিশ্চিদ্র সামরিক বেড়াজালে ঘেরা নেগেভ মরুভূমির গর্ব বীরসেবা শহরের অভিজাত গর্বও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে ইরান। কদিনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাতেই এই কাহিল অবস্থা। গুদামের দরজা খুললে কি হতো সেই পরিণতিটাও এখন সহজেই অনুমেয়।

কে রাজা কে প্রজা-সে প্রশ্ন এখন নিতান্তই রসিকতা। খোলা চোখেই তার উত্তর দেখেছে গোটা বিশ্ব। চলতি পথে সে জয়োল্লাস শুনেছে যুদ্ধের বারুদ হাওয়াও। বছরের পর বছর ধরে নানা অজুহাত-ওসিলায় পারস্য এই জাতিকে নিষেধাজ্ঞার লাগামে বেঁধে রাখলেও মনোবল দমাতে পারেনি একচুলও।

তেহরানের বাসিন্দাদের মুখে শোনা, পূর্বপুরুষদের মতোই নিজেদের দুর্বার ‘মরু ঘোড়া’ মনে করেন ইরানিরা। ভয়ংকর বালুঝড়েও ক্ষিপ্রতা পড়ে না পায়ের। বীরের জাত। শেষ পর্যন্ত ভয় পায় না। যুদ্ধ তাদের পৈতৃক অহংকার। এটাই তাদের ইতিহাস। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধে আরও একবার সেই ইতিহাসই লিখল ইরান। যুদ্ধের গোড়াতে ঠিক এই প্রতিধ্বনিই ছিল দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের।

উত্তাল কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘শেষ ইতিহাস লিখবে ইরান।’ কি আশ্চর্য আত্মবিশ্বাস-অঙ্ক শেষে যোগফল সেটাই! শুধু ইসরাইল নয়, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের তাবড় তাবড় সব পরাক্রমশালী প্রতিদ্ব›দ্বী ঘেরা রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কতটা সাহস থাকলে একটা নিঃসঙ্গ কণ্ঠ এতটা গর্জে উঠে তার সর্বশেষ প্রমাণও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ইরান।

তিন পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলার ২৪ ঘণ্টাও পেরোতে দেয়নি। তার মধ্যেই প্রতিশোধ নিয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে লিখল আরেক নতুন ইতিহাস। হামলাটি কিন্তু মোটেও জ্ঞানশূন্য ছিল না।

ডানে-বামে, সামনে-পেছনের রণফাঁদ-প্রতিক্রিয়া-পরিণামের ষোলোআনা পরিণতি মাথায় রেখেই ‘তরবারির খাপ’ খুলেছিল ইরান।

ট্যাগস :

ইসরাইলের দম্ভচূর্ণ

আপডেট সময় ১১:২৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

অভিবাসন ডেস্ক :: যত গর্জে তত বর্ষে না। ‘অকালপক্ব’ মেঘের মতো ‘আকাশ কাঁপানো’ হাঁকডাক ছেড়ে দু-কদমেই দম ফুরিয়ে যায় যে ঘোড়ার-জাত বেদুইনরা তাকে ‘ভেড়া’ বলেই টিটকারি-মশকরা করে বলে শুনেছি!

মার্কিন অক্সিজেনে হালুম-হুলুম গর্জন ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের রক্তখেকো দানব ইসরাইলের দশা এখন সেরকমই। হাওয়া তুলে নিজেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মরুর উত্তাল বালুঝড়ে। মাত্র ১২ দিনেই কুপোকাত। পায়ের দৌড় শেষ। নতজানু হয়ে ছুটে গিয়েছে ‘মুনিবের (যুক্তরাষ্ট্র) দরবারে’।

‘ত্রাহি ত্রাহি’ অবস্থা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ধামাকায়। পশ্চিমা তেজ ধার করে শান্ত মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির বিষ ঢেলে নিরস্ত্র-নিরীহ জনপদের যমদূত হয়ে ওঠা ইসরাইলের এবার ভালো শিক্ষাই হয়েছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে গত ৬ দশকের দম্ভ।

মধ্যপ্রাচ্যে আমিই রাজা-খামেনির ‘চোয়াল কাঁপা’ চপেটাঘাতে বেয়াড়া সেই ভূত এবার পালিয়েছে নেতানিয়াহুর। লম্ফঝম্প শেষ। এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ ধ্যানে বসেছে হোয়াইট হাউজের ‘বটতলায়’।

প্রযুক্তি সূতিকাগার তেল আবিব, সর্বাধুনিক নৌশক্তিতে ঘেরা বাণিজ্যিক মেরুদণ্ড বন্দর নগরী হাইফা, বিশ্বসেরা গোয়েন্দার তকমাধারী মোসাদের সদর দপ্তর, নিশ্চিদ্র সামরিক বেড়াজালে ঘেরা নেগেভ মরুভূমির গর্ব বীরসেবা শহরের অভিজাত গর্বও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে ইরান। কদিনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাতেই এই কাহিল অবস্থা। গুদামের দরজা খুললে কি হতো সেই পরিণতিটাও এখন সহজেই অনুমেয়।

কে রাজা কে প্রজা-সে প্রশ্ন এখন নিতান্তই রসিকতা। খোলা চোখেই তার উত্তর দেখেছে গোটা বিশ্ব। চলতি পথে সে জয়োল্লাস শুনেছে যুদ্ধের বারুদ হাওয়াও। বছরের পর বছর ধরে নানা অজুহাত-ওসিলায় পারস্য এই জাতিকে নিষেধাজ্ঞার লাগামে বেঁধে রাখলেও মনোবল দমাতে পারেনি একচুলও।

তেহরানের বাসিন্দাদের মুখে শোনা, পূর্বপুরুষদের মতোই নিজেদের দুর্বার ‘মরু ঘোড়া’ মনে করেন ইরানিরা। ভয়ংকর বালুঝড়েও ক্ষিপ্রতা পড়ে না পায়ের। বীরের জাত। শেষ পর্যন্ত ভয় পায় না। যুদ্ধ তাদের পৈতৃক অহংকার। এটাই তাদের ইতিহাস। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধে আরও একবার সেই ইতিহাসই লিখল ইরান। যুদ্ধের গোড়াতে ঠিক এই প্রতিধ্বনিই ছিল দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের।

উত্তাল কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘শেষ ইতিহাস লিখবে ইরান।’ কি আশ্চর্য আত্মবিশ্বাস-অঙ্ক শেষে যোগফল সেটাই! শুধু ইসরাইল নয়, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের তাবড় তাবড় সব পরাক্রমশালী প্রতিদ্ব›দ্বী ঘেরা রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কতটা সাহস থাকলে একটা নিঃসঙ্গ কণ্ঠ এতটা গর্জে উঠে তার সর্বশেষ প্রমাণও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ইরান।

তিন পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলার ২৪ ঘণ্টাও পেরোতে দেয়নি। তার মধ্যেই প্রতিশোধ নিয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে লিখল আরেক নতুন ইতিহাস। হামলাটি কিন্তু মোটেও জ্ঞানশূন্য ছিল না।

ডানে-বামে, সামনে-পেছনের রণফাঁদ-প্রতিক্রিয়া-পরিণামের ষোলোআনা পরিণতি মাথায় রেখেই ‘তরবারির খাপ’ খুলেছিল ইরান।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471