ঢাকা ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্যারিসে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্সের তৃতীয় সিলেট উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত নবীগঞ্জে ৫০ বছর পুর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী বাস্তবায়ন কমিটির  অভিষেক ও লোগো উন্মোচন সুনামগঞ্জ-৫ ছাতক-দোয়ারা বাজার আসনে গণফোরাম থেকে মনোনয়ম পেলেন টি এইচ এম জাহাঙ্গীর সিলেটের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দীপংকর দাস দ্বীপ আর নেই প্যারিসে কবিতা-সুর ও চিত্রে Festival Terres du Bengale সম্পন্ন লন্ডনে বড়লেখা ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’র আয়োজনে জমজমাট ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত অনশন ভাঙিয়ে আমজনতার তারেককে হাসপাতালে পাঠালেন সালাহউদ্দিন সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি সোমবার স্থগিত নাট্যসংঘ কানাডার চতুর্থ নাট্যোৎসব ৮-৯ নভেম্বর পর্তুগালের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি খুন

টেকসই রূপান্তরের জন্য পর্যটন : একটি ভাবনা, একটি সম্ভাবনা

মোঃ মামুন হাসান :: প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর যখন বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়, তখন শুধুমাত্র ভ্রমণের আনন্দ নয়, বরং ভ্রমণ কিভাবে আমাদের জীবন, পরিবেশ এবং অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠে। এ বছরের প্রতিপাদ্য “পর্যটন ও টেকসই রূপান্তর” আমাদের শেখায় যে ভ্রমণ কেবল বিনোদন নয়, বরং এটি হতে পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী মাধ্যম।

ভ্রমণ মানে শুধু স্থান দেখা নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সংযোগ, প্রকৃতির রঙের সঙ্গে ছোঁয়া, ইতিহাসের সুর শুনা। কিন্তু যদি পর্যটন অযত্নে পরিচালিত হয়, তবে তা প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বন উজাড় হয়, নদী দূষিত হয়, পাহাড় ক্ষয়ে যায়। তাই আজ প্রয়োজন এমন একটি পর্যটন যা প্রকৃতিকে রক্ষা করবে, স্থানীয় জনগণকে স্বাবলম্বী করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি যোগ করবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রাম, নদী, উপকূল এবং পাহাড় প্রতিটি জায়গায় অগণিত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। স্থানীয় জনগণ যদি পর্যটনের মূল অংশীদার হন, তাদের ঘরে অতিথি আসুক, তাদের হাতে উঠে আসুক সংস্কৃতি, তবে পর্যটন হবে জীবন্ত এবং স্থায়ী। উদাহরণস্বরূপ, সিলেটের চা বাগান, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের লেক ভ্রমণ, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত প্রতিটি জায়গা স্থানীয় জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত পর্যটনের জন্য উপযুক্ত। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক জায়গায় অবকাঠামোর অভাব, কোথাও বর্জ্য এবং দূষণ, কোথাও পর্যটকের অসচেতনতা। অর্থায়নের সংকট এবং দক্ষ জনবলের অভাবও প্রকট। তবে এই বাধাই নতুন উদ্ভাবনের পথ তৈরি করে। উদ্ভাবনী পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় উদ্যোগ মিলিত হলে সমস্যাগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য।

বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যেই টেকসই পর্যটনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। ভারত, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি ও নরওয়ে এমন উদাহরণ যেখানে স্থানীয় উদ্যোগ, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ পর্যটনের মূল ভিত্তি। তারা দেখিয়েছে কিভাবে পর্যটন কেবল অর্থ নয়, বরং সামাজিক এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সেতুবন্ধন হতে পারে। বাংলাদেশেও সম্ভাবনা অনন্ত। হোমস্টে ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, অচেনা নদীতীর বা গ্রামীণ মেলা পর্যটনের আকর্ষণ হতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে ডিজিটাল মানচিত্র ও গাইড তৈরি করা সম্ভব, যেখানে ভ্রমণকারী সহজেই জানতে পারবেন স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রুট সংক্রান্ত তথ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থানীয় মানুষকে সচেতন ও প্রশিক্ষিত করা। তারা যখন এই পরিবর্তনের অংশীদার হবে, তখন পর্যটন সত্যিকারের টেকসই রূপান্তরের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

শেষ পর্যন্ত পর্যটন এক ধরনের যাত্রা যা আমাদের ভেতরের মানুষকে নতুন করে জাগায়। এটি কেবল এক দিনের বিনোদন নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যতের দরজা। আসুন আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল পর্যটক হই। পরিবেশকে রক্ষা করি, সংস্কৃতিকে সম্মান করি এবং মানুষের সঙ্গে গড়ে তুলি বিশ্বাস ও সমবেদনার সম্পর্ক। তাহলেই পর্যটন হয়ে উঠবে সত্যিকারের রূপান্তরের শক্তি।
লেখক:

ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ও বিভাগীয় প্রধান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

প্যারিসে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্সের তৃতীয় সিলেট উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত

টেকসই রূপান্তরের জন্য পর্যটন : একটি ভাবনা, একটি সম্ভাবনা

আপডেট সময় ০১:০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ মামুন হাসান :: প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর যখন বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়, তখন শুধুমাত্র ভ্রমণের আনন্দ নয়, বরং ভ্রমণ কিভাবে আমাদের জীবন, পরিবেশ এবং অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠে। এ বছরের প্রতিপাদ্য “পর্যটন ও টেকসই রূপান্তর” আমাদের শেখায় যে ভ্রমণ কেবল বিনোদন নয়, বরং এটি হতে পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী মাধ্যম।

ভ্রমণ মানে শুধু স্থান দেখা নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সংযোগ, প্রকৃতির রঙের সঙ্গে ছোঁয়া, ইতিহাসের সুর শুনা। কিন্তু যদি পর্যটন অযত্নে পরিচালিত হয়, তবে তা প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বন উজাড় হয়, নদী দূষিত হয়, পাহাড় ক্ষয়ে যায়। তাই আজ প্রয়োজন এমন একটি পর্যটন যা প্রকৃতিকে রক্ষা করবে, স্থানীয় জনগণকে স্বাবলম্বী করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি যোগ করবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রাম, নদী, উপকূল এবং পাহাড় প্রতিটি জায়গায় অগণিত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। স্থানীয় জনগণ যদি পর্যটনের মূল অংশীদার হন, তাদের ঘরে অতিথি আসুক, তাদের হাতে উঠে আসুক সংস্কৃতি, তবে পর্যটন হবে জীবন্ত এবং স্থায়ী। উদাহরণস্বরূপ, সিলেটের চা বাগান, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের লেক ভ্রমণ, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত প্রতিটি জায়গা স্থানীয় জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত পর্যটনের জন্য উপযুক্ত। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক জায়গায় অবকাঠামোর অভাব, কোথাও বর্জ্য এবং দূষণ, কোথাও পর্যটকের অসচেতনতা। অর্থায়নের সংকট এবং দক্ষ জনবলের অভাবও প্রকট। তবে এই বাধাই নতুন উদ্ভাবনের পথ তৈরি করে। উদ্ভাবনী পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় উদ্যোগ মিলিত হলে সমস্যাগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য।

বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যেই টেকসই পর্যটনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। ভারত, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি ও নরওয়ে এমন উদাহরণ যেখানে স্থানীয় উদ্যোগ, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ পর্যটনের মূল ভিত্তি। তারা দেখিয়েছে কিভাবে পর্যটন কেবল অর্থ নয়, বরং সামাজিক এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সেতুবন্ধন হতে পারে। বাংলাদেশেও সম্ভাবনা অনন্ত। হোমস্টে ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, অচেনা নদীতীর বা গ্রামীণ মেলা পর্যটনের আকর্ষণ হতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে ডিজিটাল মানচিত্র ও গাইড তৈরি করা সম্ভব, যেখানে ভ্রমণকারী সহজেই জানতে পারবেন স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রুট সংক্রান্ত তথ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থানীয় মানুষকে সচেতন ও প্রশিক্ষিত করা। তারা যখন এই পরিবর্তনের অংশীদার হবে, তখন পর্যটন সত্যিকারের টেকসই রূপান্তরের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

শেষ পর্যন্ত পর্যটন এক ধরনের যাত্রা যা আমাদের ভেতরের মানুষকে নতুন করে জাগায়। এটি কেবল এক দিনের বিনোদন নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যতের দরজা। আসুন আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল পর্যটক হই। পরিবেশকে রক্ষা করি, সংস্কৃতিকে সম্মান করি এবং মানুষের সঙ্গে গড়ে তুলি বিশ্বাস ও সমবেদনার সম্পর্ক। তাহলেই পর্যটন হয়ে উঠবে সত্যিকারের রূপান্তরের শক্তি।
লেখক:

ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ও বিভাগীয় প্রধান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471