রিফাত আরা রিফা : : হাসিমুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টকে আমরা কতটা দেখতে পাই? আমাদের চারপাশের মানুষগুলো অফিসে যায়, ক্লাসে বসে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়, ফেসবুকে ছবি দেয়—সব ঠিকঠাকই মনে হয়। অথচ তাদের ভেতরের অস্থিরতা আর যন্ত্রণা আমরা শুনতে পাই না। মনের গোপন আঘাত আর হতাশার যন্ত্রণা প্রকাশ পায় না শব্দে, কিন্তু তার প্রতিধ্বনি থেকে যায় একটি নিঃশব্দ আর্তনাদ হয়ে।
মানুষের এই নীরব চিৎকারের পেছনে থাকে অসংখ্য কারণ। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক সংকট, প্রেম বা সম্পর্কের ভাঙন, সমাজের অবহেলা, বেকারত্ব—এসব একে একে মনের উপর পাহাড়সম চাপ সৃষ্টি করে। ডিপ্রেশন, উদ্বেগ আর একাকিত্বের মতো মানসিক সমস্যা তখন জীবনকে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। কিন্তু আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার অভাব আছে; সাহায্য চাইলে মানুষকে ‘দুর্বল’ বলা হয়, আর এভাবে আমরা আরও দূরে ঠেলে দিই তাদের।
এই নীরব আত্মচিৎকারের পরিণতিই মাঝে মাঝে হয়ে ওঠে ভয়ংকর—কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, কেউ মনের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নেয়। অথচ তারা যদি সময়মতো একজনের সহানুভূতি পেত, যদি কেউ কেবল শুনে বলত “তুমি একা নও”—তাহলে হয়তো জীবন বেঁচে যেত, মন বাঁচতে পারত।
মানুষের মানসিক কষ্ট বোঝা আমাদের সবার দায়িত্ব। পরিবারকে সময় দেওয়া, বন্ধুদের খোঁজ নেওয়া, সহকর্মীর সমস্যায় কান দেওয়া—এই ছোট ছোট কাজগুলোই কারও জীবন বাঁচাতে পারে। একইসাথে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, সচেতনতা বাড়ানো এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইনের তথ্য প্রচার করা এখন সময়ের দাবি।
আমরা যত দ্রুত শিখব মানুষের এই নীরব আর্তনাদ শুনতে, তত দ্রুত পরিবর্তন আসবে। কারণ প্রতিটি হাসির আড়ালেই হয়তো লুকিয়ে আছে একটি কণ্ঠ, যে কণ্ঠ বলতে চায়—“আমাকে শুনুন।” সেই কণ্ঠে আমরা যদি সাড়া দিই, তবেই থেমে যাবে অনেক নিঃশব্দ আর্তনাদ।
পরামর্শদাতা,
এলাহো অটিজম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইউএসএ