শেখ খায়রুল কবির :: বর্তমান জাতীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের লক্ষ্য একটি আদর্শিক সংগঠন গড়ে তোলা, যা ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হবে। তারা মনে করে, শক্তিশালী সাংগঠনিক সংস্কৃতি ও পেশাদার নেতৃত্বের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সংগঠনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব।
জাতীয় নাগরিক কমিটির তরুণ নেতৃত্ব উপলব্ধি করেছে—ইতিহাস “যদি” বা “কিন্তু” দিয়ে গড়ে ওঠে না; যা ঘটে গেছে, তাই ইতিহাস। তারা স্বীকার করে, বয়োজ্যেষ্ঠরা দেশের জন্য যেভাবে কাজ করতে চান এবং তরুণ প্রজন্ম যেভাবে দেশের উপকারে আসতে চায়, এই দুই প্রজন্মের চাহিদা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এক বিশাল ব্যবধান রয়েছে।
তারা মনে করে, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শের কথা বললেও তাদের বাস্তব লড়াই অনেকাংশেই অনর্জিত সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। প্রচলিত রাজনীতির “শেষ কথা বলে কিছু নেই” দর্শনটি আসলে স্বার্থসিদ্ধির জন্য মতাদর্শকে তুচ্ছ করার বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, নিরপেক্ষতার নামে পক্ষপাতিত্বকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে মুক্ত হতে হবে।
তারা নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার জন্য যুগোপযোগী প্রতিবাদের ভাষা ও দর্শন তৈরির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তথাকথিত রাজনীতির আড়ম্বরপূর্ণ উপস্থাপনা—বড় বড় ছবির ব্যবহার, মঞ্চে চেয়ার নিয়ে টানাটানি, ফুলের তোড়া, বা গেইট নির্মাণের মতো চর্চাগুলোকে তারা অপ্রাসঙ্গিক ও তুচ্ছ মনে করে। তাদের মতে, রাজনীতির আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশ ও মানুষের কল্যাণে সঠিক ও টেকসই পরিবর্তন আনা।
জাতীয় নাগরিক কমিটি বিদ্যমান দমনমূলক, দলদাস ও দলকানা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে পরিমিতিবোধ ও বাস্তবিক রাজনৈতিক চর্চার উপর জোর দিচ্ছে। তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা না দিয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে।
একমাত্র শক্তিশালী সংগঠন ও আদর্শিক নেতৃত্বই পারে দেশকে একটি নতুন রাজনৈতিক প্রেরণা ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ উপহার দিতে। জাতীয় নাগরিক কমিটি সেই স্বপ্নের ভিত্তি রচনার পথে এগিয়ে চলেছে।
লেখক:
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন কর্মী।