সাদিকুর রহমান সাকি, সিলেট থেকে :: সিলেটের রাজনীতিতে বরাবরই প্রবাসীদের আধিক্য বেশি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অনেকেই প্রবাস থেকে এসে মন্ত্রী, এমপি ও মেয়রসহ জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন। ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সবাই উধাও। কেউ নেই সিলেটে। মাঝে মধ্যে জানান দিচ্ছেন আছেন প্রবাসে। পটপরিবর্তনের সময় সিলেটে অবস্থান করছিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলবল নিয়ে নিরাপদে লুকিয়ে ছিলেন। ক’দিন আগে নীরবতা ভাঙলেন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। সিলেট থেকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর ওখান থেকে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন। তার মতো বহু নেতা সিলেট থেকে লন্ডনে চলে গেছেন। তবে বেশির ভাগ নেতাকর্মী রয়েছে ভারতে। প্রথমে ছিলেন শিলংয়ে। সেখান থেকে এখন আসাম, কলকাতাসহ নানা স্থানে তারা বসবাস করছেন।
কেমন সংখ্যক নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি ভারতে শিলং থেকে আসা নোমান নামের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন- সংখ্যা ধারণা করা কঠিন। তবে হাজারো নেতাকর্মী অবস্থান করছে বলে তিনি শুনেছেন। যারা মেঘালয়ের শিলং শহরে ছিলেন তারাতারা অনেকেই গ্রাম এলাকায় চলে গেছেন। কারণ বৈধ ভিসা ছাড়া শিলংয়ে হোটেল কিংবা বাসা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু নেতাকর্মী আসামের হুজাই, শিলচর এলাকায় বসবাস করছেন। সিলেটি ভাষাভাষি এসব এলাকায় নিরাপদেই নেতাকর্মীরা রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতা কলকাতায় আছেন। তবে কলকাতা থেকে কয়েকজন শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। এরমধ্যে রয়েছেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। ভিসা থাকায় তারা ভারত হয়েই বিদেশে পাড়ি দেন। আর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে পৌঁছে পরপর দুটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সরব রয়েছেন।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতা সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে ভারতে অবস্থান করা দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর যেসব আওয়ামী লীগ নেতা সিলেট শাসন করেছিলেন তারা এখন আর মাঠে নেই।দৃশ্যপট বদলে সিলেটে কোথাও দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরব হয়েছেন বিএনপি, জামায়াতসহ পূর্বে যারা বিরোধী ছিলেন সেসব দলের নেতারা। সিলেটের পরিচিত মুখ সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী দীর্ঘ ১০ বছর ছিলেন নির্বাসনে। বৃদ্ধা মা সিলেটের বন কলাপাড়া বাসায় অবস্থান করলেও তাকে দেখতে আসতে পারেননি। তবে দেশের হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইটহাউজ ও জাতিসংঘে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। পটপরিবর্তনের পর এ সাংবাদিক সম্প্রতি সিলেটে এসেছেন। বিএনপি’র কয়েকশ’ নেতা মামলায় জর্জরিত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন বিদেশে। অনেকেরই অবস্থান ছিল যুক্তরাজ্যে। পটপরিবর্তনের পর ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সিলেটে এসেছেন। মামলা থাকার কারণে এসেই অনেকে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।
গত সপ্তাহে সিলেটে গণতন্ত্র দিবসে সমাবেশ ও র্যালি করেছে বিএনপি। এ সমাবেশে দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে এসে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। তারা সিলেটে ফিরে চাঙ্গা হয়েছে বিএনপি। তাদের ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। জামায়াতের অনেক নেতা নির্যাতনের মুখে পড়ে দেশ ছেড়েছিলেন। অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীও হয়েছেন। এরপরও মুক্ত পরিবেশ উপভোগ করতে তারা দেশে আসছেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ দেশে এসে মামলা মোকাবিলা করে ফের বিদেশেও চলে যাচ্ছেন।সিলেট নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেক নেতাকর্মী নির্যাতনের মুখে সিলেট ছেড়েছিলেন। কেউ কেউ পরিবার, পরিজনের চাপের মুখে দেশ ছাড়েন। মামলার আসামি হয়ে কেউ চলে গিয়েছিলেন প্রবাসে। ওখানে থাকলেও তারা নানাভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। সহযোগিতাও করেছেন দেশের নির্যাতিত মানুষকে। পটপরিবর্তনের পর অনেকেই চলে আসছেন। তারা ফিরে আসায় সিলেটে বিএনপি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। দেশে ফিরে তারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। ওদিকে সিলেটে একাধিক পৌরসভা ও অর্ধশতাধিক ইউপি চেয়ারম্যানরা ছিলেন প্রবাসী। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে যুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধি হন। বিশ্বনাথের মেয়র মুহিবুর রহমান, গোলাপগঞ্জের মেয়র রাবেল আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরীসহ অনেকেই ছিলেন প্রবাসী। পটপরিবর্তনের পর তারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।