ইউএনবি : সমাজসংস্কার ও নগরায়ণের নেপথ্যে মূল চালিকা শক্তি হলো উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রায়োগিক জ্ঞান। এ দক্ষতার বলে যেকোনো জাতি তাদের ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জাপান। যুদ্ধাহত ও দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার পরও দেশটি এশিয়ার সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। সংগত কারণেই দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পড়াশোনার জন্য প্রতিবছর জাপানমুখী হন হাজারো শিক্ষার্থী। চলুন, জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনপদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও অধ্যয়নের খরচ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
জাপানে কেন পড়তে যাবেন : শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (এমইএসটি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দেশটির প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই জায়গা দখল করে আছে কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ শতকে। তার মধ্যে ২৮তম অবস্থানে আছে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও এবং ৪৬ নম্বরে রয়েছে কিয়োটো ইউনিভার্সিটি। ওসাকা ইউনিভার্সিটি ও টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির র্যাঙ্কিং যথাক্রমে ৮০ ও ৯১। বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে বিখ্যাত সব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল।
জাপানে উচ্চশিক্ষার পূর্বশর্ত : এখানকার ইংরেজি ভাষার স্নাতক প্রোগ্রামগুলোয় ভর্তির জন্য টোয়েফেল (আইবিটি) স্কোর ন্যূনতম ৭২ বা আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর ৫ দশমিক ৫ থাকতে হবে। তবে স্নাতকোত্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আরও বেশি স্কোরের দরকার হতে পারে। স্থানীয় ভাষা বাধ্যতামূলক না হলেও জাপানিরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দোকানপাট ও অফিস সব জায়গায় তাঁদের নিজস্ব ভাষাকেই অগ্রাধিকার দেয়। তা ছাড়া সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার স্কলারশিপ পেতে হলে জাপানি ভাষা শেখা অপরিহার্য।
ইজেইউ : জাপানের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্র–ছাত্রীদের ভর্তির পূর্বশর্ত হিসেবে স্কোরটি দেখাতে হয়। ইজেইউ পূর্ণরূপ হলো এক্সামিনেশন ফর জাপানিজ ইউনিভার্সিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষা ও একাডেমিক দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। এ পরীক্ষায় বেশি স্কোর পাওয়ার মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ পরীক্ষার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানি ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত ও সাধারণ বিষয়। বিজ্ঞান বিভাগটি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে বিভক্ত। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য জুন বা নভেম্বরের মধ্যে জাপানে পৌঁছাতে হবে।
জেএলপিটি : এটি হচ্ছে জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা, যা অধিকাংশ জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হয়। এতে রয়েছে পাঁচটি মেধা স্তর, যেখানে সর্বোচ্চ স্তর এন৫ এবং সর্বনিম্ন স্তর এন১ হিসেবে অভিহিত হয়। জাপানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য সাধারণত কমপক্ষে এন২ স্তর থাকতে হয়।
জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় : কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২০০-তে থাকা ৯ জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় হলো: ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, কিয়োটো ইউনিভার্সিটি, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, তোহোকু ইউনিভার্সিটি, কিউশু ইউনিভার্সিটি, নাগোয়া ইউনিভার্সিটি, হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি ও ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি।
জাপানে আবেদনের উপায় : বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত স্প্রিং, সামার ও ফল—এই তিন মৌসুমে ভর্তি নিয়ে থাকে। প্রথমে আবেদন, অতঃপর প্রবেশিকার পরীক্ষা, এই দুই ধাপে পুরো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
আবেদন : এ ধাপে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়। এখানে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড ও আবেদন ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে হয়। এ সময় শুধু গৃহীত কাগজপত্রের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে যে বিষয়গুলোয় সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেগুলো হলো—
ইজেইউ স্কোর;
জেএলপিটি স্কোর;
আইইএলটিএস/টোফেল (আইবিটি) স্কোর;
এই দ্বিতীয় ধাপে প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কম্পিউটার সায়েন্স, স্থাপত্য, অর্থনীতি, হেলথকেয়ার এবং মেডিসিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান।