ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতার লোভে অন্ধ তিনবারের এমপি মজিদ, নির্বাচনে হেরে বাগিয়ে নেন পিপির পদ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:১৮:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

মো. আব্দুল মজিদ খান। ছবি : সংগৃহীত

অভিবাসন ডেস্ক :: ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন মো. আব্দুল মজিদ খান। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে ডামি প্রার্থী হিসাবে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন তিনি। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিতও হয়েছিলেন। কিন্তু চেয়ার আর ক্ষমতার নেশায় অন্ধ ছিলেন মজিদ খান। কোনো অবস্থাতেই যেন ক্ষমতার লোভ ছাড়তে চান না তিনি। যেখানেই হোক চেয়ার আর ক্ষমতার তার চাই-ই চাই।

তাই তো তিনবার সংসদ সদস্য থাকার পর চতুর্থবার হেরে গিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে লবিং-তদবির করে বাগিয়ে নেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (সরকারি আইন কর্মকর্তা) পদ। এ সময় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। মামলার তদবিরেও তার জুড়ি ছিল না। মানব পাচার মামলায় একবার এক বিচারকের কাছে কারাবন্দি এক প্রবাসী আসামির জামিনের জন্য বলেন তিনি। কিন্তু ওই বিচারক পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে জামিন দিতে রাজি হন। তাতে তার মন ভরেনি। পাসপোর্ট জমা না রেখে জামিন দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই বিচারকের বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের আইনজীবীদের দিয়ে বিদ্রোহ করান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিচারক বলেন, ‘মানব পাচার মামলায় গ্রেফতার ওই ব্যক্তি জামিন পেলেই বিদেশে চলে যেতেন। যেহেতু তার বৈধ ভিসা ছিল। তিনি ইউরোপের একটি দেশে থাকতেন। তাই আমি বলেছিলাম পাসপোর্ট আদালতে জমা দিলে তাকে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। আমাকে নানাভাবে কৌশলে হুমকি দেন। পরে তার পছন্দের আইনজীবীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করান। ওই আইনজীবীরা আমার কোর্ট না করার ঘোষণা দেন। তখন যেহেতু তার দল ক্ষমতায় ছিল তাই তিনি এমন আচরণ করতে পেরেছিলেন। অনেক আইনজীবী আমার কোর্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ক্ষমতার ভয়ে কেউ কোর্ট করেননি। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস পর আমি বদলি হয়ে হবিগঞ্জ থেকে চলে যাই। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমার বিচার আল্লাহ করেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীপন্থি আইনজীবী বলেন, মজিদ খান তিনবার সংসদ-সদস্য হয়েছেন। আইন প্রণয়ন করতেন। সংসদীয় কমিটিতে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তাতে কি আসে যায়। বয়সও হয়ে গেছে তার। সন্তানাদিও নেই। একজন মানুষের জীবনে কত কি চাই। উচিত ছিল এটি অন্য কেউ করবেন। কিন্তু তিনি লোভ ছাড়তে পারেননি। সংসদ-সদস্য থেকে তিনি এক লাফে আইন কর্মকর্তার চেয়ারে এসে বসেছিলেন। তখন বিষয়টি আইনজীবীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের পূর্বে আব্দুল মজিদ খান ছিলেন একজন আইনজীবী। জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। তবে আইনজীবী হিসাবে তার তেমন খ্যাতি ছিল না। এলাকার মানুষজন তাকে তেমন চিনতেন না। হবিগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি টিনশেড (কাঁচা ঘর) বাসায় থাকতেন তিনি।

২০০৮ সালে প্রথমবার তিনি হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আরও দুবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কিন্তু ডামি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এরপরই চেয়ারের লোভ তাকে পেয়ে বসে।

যেকোনো পর্যায়ের একটি চেয়ার তাকে চাই-ই চাই। শেষ পর্যন্ত ফাঁকা পেয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর পদটি তিনি বাগিয়ে নেন। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এ পদে বসেন। তখন এ পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। পদটির জন্য তিনিসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী তখন লবিং-তদবির করছিলেন। সংসদ-সদস্য থেকে পাবলিক প্রসিকিউটর হওয়ায় জেলায় আইনজীবীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। – দৈনিক যুগান্তর

ট্যাগস :

ক্ষমতার লোভে অন্ধ তিনবারের এমপি মজিদ, নির্বাচনে হেরে বাগিয়ে নেন পিপির পদ

আপডেট সময় ০৪:১৮:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অভিবাসন ডেস্ক :: ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন মো. আব্দুল মজিদ খান। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে ডামি প্রার্থী হিসাবে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন তিনি। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিতও হয়েছিলেন। কিন্তু চেয়ার আর ক্ষমতার নেশায় অন্ধ ছিলেন মজিদ খান। কোনো অবস্থাতেই যেন ক্ষমতার লোভ ছাড়তে চান না তিনি। যেখানেই হোক চেয়ার আর ক্ষমতার তার চাই-ই চাই।

তাই তো তিনবার সংসদ সদস্য থাকার পর চতুর্থবার হেরে গিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে লবিং-তদবির করে বাগিয়ে নেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (সরকারি আইন কর্মকর্তা) পদ। এ সময় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। মামলার তদবিরেও তার জুড়ি ছিল না। মানব পাচার মামলায় একবার এক বিচারকের কাছে কারাবন্দি এক প্রবাসী আসামির জামিনের জন্য বলেন তিনি। কিন্তু ওই বিচারক পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে জামিন দিতে রাজি হন। তাতে তার মন ভরেনি। পাসপোর্ট জমা না রেখে জামিন দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই বিচারকের বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের আইনজীবীদের দিয়ে বিদ্রোহ করান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিচারক বলেন, ‘মানব পাচার মামলায় গ্রেফতার ওই ব্যক্তি জামিন পেলেই বিদেশে চলে যেতেন। যেহেতু তার বৈধ ভিসা ছিল। তিনি ইউরোপের একটি দেশে থাকতেন। তাই আমি বলেছিলাম পাসপোর্ট আদালতে জমা দিলে তাকে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। আমাকে নানাভাবে কৌশলে হুমকি দেন। পরে তার পছন্দের আইনজীবীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করান। ওই আইনজীবীরা আমার কোর্ট না করার ঘোষণা দেন। তখন যেহেতু তার দল ক্ষমতায় ছিল তাই তিনি এমন আচরণ করতে পেরেছিলেন। অনেক আইনজীবী আমার কোর্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ক্ষমতার ভয়ে কেউ কোর্ট করেননি। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস পর আমি বদলি হয়ে হবিগঞ্জ থেকে চলে যাই। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমার বিচার আল্লাহ করেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীপন্থি আইনজীবী বলেন, মজিদ খান তিনবার সংসদ-সদস্য হয়েছেন। আইন প্রণয়ন করতেন। সংসদীয় কমিটিতে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তাতে কি আসে যায়। বয়সও হয়ে গেছে তার। সন্তানাদিও নেই। একজন মানুষের জীবনে কত কি চাই। উচিত ছিল এটি অন্য কেউ করবেন। কিন্তু তিনি লোভ ছাড়তে পারেননি। সংসদ-সদস্য থেকে তিনি এক লাফে আইন কর্মকর্তার চেয়ারে এসে বসেছিলেন। তখন বিষয়টি আইনজীবীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের পূর্বে আব্দুল মজিদ খান ছিলেন একজন আইনজীবী। জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। তবে আইনজীবী হিসাবে তার তেমন খ্যাতি ছিল না। এলাকার মানুষজন তাকে তেমন চিনতেন না। হবিগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি টিনশেড (কাঁচা ঘর) বাসায় থাকতেন তিনি।

২০০৮ সালে প্রথমবার তিনি হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আরও দুবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কিন্তু ডামি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এরপরই চেয়ারের লোভ তাকে পেয়ে বসে।

যেকোনো পর্যায়ের একটি চেয়ার তাকে চাই-ই চাই। শেষ পর্যন্ত ফাঁকা পেয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর পদটি তিনি বাগিয়ে নেন। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এ পদে বসেন। তখন এ পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। পদটির জন্য তিনিসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী তখন লবিং-তদবির করছিলেন। সংসদ-সদস্য থেকে পাবলিক প্রসিকিউটর হওয়ায় জেলায় আইনজীবীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। – দৈনিক যুগান্তর


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464