মিজান মোহাম্মদ: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে স্বাগতিকদের ১৯১ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে শুভ সূচনা করে অথিতি জিম্বাবুয়ে। এ দিন ব্যাট-বল কোন জায়গায়ই সুবিধা করতে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ। দিনের একবারে শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০ ওভারে ৬৭ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। চার চারজন নিয়মিত বলার ব্যবহার করেও বাংলাদেশ পায়নি কোন উইকেটের দেখা! অথচ বাংলাদেশের ব্যাটিং টাইমে ব্যাটারদের খেলা দেখে মনে হয়েছিল এটা বলিং পিছ।
এরপরে জিম্বাবুয়ের মতো তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানেই অলআউট বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ৬১ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ছিলো আশা জাগানিয়া। সাবধানী শুরু করে বড় ইনিংসের আভাস দিচ্ছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়। দীর্ঘদিন ধরে ওপেনিং নিয়ে যে শংকা তা কাটিয়ে ওঠার আভাস মিলছিলো তবে সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শুরুর স্বস্তি ম্লান করে সাজঘরের পথে হাঁটা দিয়েছেন দুজনেই। দলীয় ৩২ রানে এই দুই ওপেনারকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিন দলীয় ৩১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভিক্টর নিয়াউচির বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাদমান। আউট হয়েছেন ১২ রানে। এরপর মাঝে এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও বোলিংয়ে এসে ঝলক দেখিয়েছেন নিয়াউচি। সাজঘরে ফিরেছেন জয়কে। এই ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন ১৪ রান করে। তাতে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে ইউকেটে লড়াই করতে আসেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই দুই ব্যাটার শুরুর বিপর্যয় কাটানোর আশা জাগিয়েও টিকে থাকতে পারেন নি। দলীয় ৯৮ রানে নাজমুল হাসান শান্ত ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন। এর আগে তিনি ৬৯ বলে ৪০ রান করেন। ১২৮ বলের স্থানী এই জুটি ৬৬ রান তুলতে সক্ষম হন।
চতুর্থ ইউকেটে ক্রিজে আসেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তিনিও পারেন নি নামের প্রতি সুবিচার করতে। ১৮ বলে ৪ রান নিয়ে দলীয় ২৮.৬ ওভারে ১২৩ রানে দলকে বিপদে ফেলে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন।
একপ্রান্ত আগলে রাখা মুমিনুলকে সঙ্গ দিতে আসেন তরুণতুর্কী জাকের আলী। মুমিনুল -জাকের মিলে ২০ বলে ১৩ রান তুলতে সক্ষম হন। অভিজ্ঞ মাসাকাদজার ২ শিকার হওয়ার আগে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২২ তম টেস্ট ফিফটি। মুমিনুল ব্যক্তিগত ৫৬ রান করতে বল খেলেন ১০৫ টি। মেহেদী হাসান মিরাজও ৪ বল খেলে ১ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন।
এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। অষ্টম উইকেটে মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান জাকের আলীর সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন পেস বোলার হাসান মাহমুদ। ওই জুটিতে ৬৭ বলে ৪১ রান করেন তারা।
হাসান মাহমুদ ৩০ বলে ১৯ রান করে ব্লেসিং মুজারাবানির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। এরপর মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে আউট হন জাকের আলি অনিক ও পেস বোলার নাহিদ রানা।
জাকের আলি ৫৯ বলে ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে ২৮ রান করে মাধেভেরের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। দলের হয়ে ৮ চার আর এক ছক্কায় সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন ব্লেসিংমুজারাবানি এবং ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। দুটি করে উইকেট নেন ভিক্টর নাচুই আর ওয়েসলি মাধেভেরে।
এর আগে, দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে আজ সিলেটে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ শুরু হয়েছিল সকাল ১০টায়।
সম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না জিম্বাবুয়ের। গত ৪ বছরে একটি ম্যাচও জেতেনি তারা। হেরেছে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মতো নবীন দেশের বিপক্ষেও। তাই স্বাগতিকদের পরীক্ষা নিতে নিজেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বদলাতে হবে তাদের।
প্রতিপক্ষ তুলনামূলক কিছুটা খর্বশক্তির হলেও কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটেনি বাংলাদেশ। তিন পেসারের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজসহ দুই স্পিনার নিয়ে নামছে নামজুল শান্তর দল।
পেস বিভাগে নাহিদ রানার সঙ্গে আছেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। স্পিনে মিরাজের সঙ্গে বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম। কিপিং গ্লাভস থাকছে জাকের আলির হাতে। ওপেনিংয়ে জাকির হাসানকে টপকে সুযোগ পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। অর্থাৎ নিজেদের সেরা একাদশটাকেই প্রথম টেস্টের জন্য মাঠে নামিয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে গত চার বছর কোনো টেস্ট ম্যাচে জয়ের মুখ না দেখা জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে হারাতে মরিয়া। নিজেদের সেরা একাদশটাকেই আজ মাঠে নামিয়েছে তারা।