ঢাকা ১২:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রুমিন অনুসারীদের মহাসড়ক অবরোধ, এনসিপির বিক্ষোভ

অভিবাসন ডেস্ক :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) শুনানিকালে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি-কিল-ঘুষির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে দুই পক্ষ।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানার অনুসারীরা সরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে রোববার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ শুনানি শুরু হয়। জেলার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)-এর সঙ্গে যুক্ত করার খসড়া করেছে নির্বাচন কমিশন। এই ইউনিয়নগুলো হলো বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর। শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন রুমিন ফারহানা। এর বিপক্ষে যুক্তি দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। তিনি ওই তিন ইউনিয়নকে বিজয়নগর উপজেলাতেই দেখতে চান বলে মত দেন।

জানা গেছে, একপর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে, জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতিতে। মো. আতাউল্লাহর অভিযোগ, তিনিসহ তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। অপর দিকে রুমিন ফারহানার দাবি, আতাউল্লাহ পরিচিত মুখ নন। প্রথমে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। তারপর তো আর তাঁর লোকজন বসে থাকবেন না।

এ ঘটনার পর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সরাইলের শাহবাজপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য ও সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও শাহবাজপুর ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমান মুন্সি।

অবরোধকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে মহাসড়কের দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় ভোগান্তি। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী ও সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের অনুরোধে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুমিন ফারহানা শুধু আমাদের এলাকার নেত্রী নন। তিনি জাতীয় নেত্রী। তাঁর ওপর ঢাকায় হামলার প্রতিবাদে আমরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। ইউএনও ও ওসির অনুরোধে আজকে আমরা সরে এসেছি। যারা হামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। রুমিন ফারহানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন নিয়ে যে মতামত দিয়েছেন, আমরা তাঁর পক্ষে রয়েছি।’

একই ঘটনায় বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রুমিন ফারহানা একসময় ছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান রুমিন ফারহানা। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে নির্বাচন করতে চান জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন (মাহবুব শ্যামল) ও এনসিপির মো. আতাউল্লাহ।

এদিকে ইসিতে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহসহ অন্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিকেল ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ হয়।

এনসিপির ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের যুগ্ম সমন্বয়ক সাহিল আহমেদ, সদস্য আসাদুজ্জামান, দ্বীন ইয়ামিন, আরিফ বিল্লাহ হাফেজী, কসবার যুগ্ম সমন্বয়ক মামুন বাতেন, আশুগঞ্জের সমন্বয়ক মো. ডালিম ও যুগ্ম সমন্বয়ক জয়ন্তী বিশ্বাস, নবীনগরের সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি গাজী নিয়াজুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচি থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগসহ বিএনপির নেতা রুমিন ফারহানার বিচারের দাবি করা হয়।

বক্তারা বলেন, ইসিতে রুমিন ফারহানার নেতা-কর্মীরা এনসিপির নেতা আতাউল্লাহ ও অন্য নেতা-কর্মীদের মারধর করেন। আতাউল্লাহর পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তাঁর হাতে আঘাত করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তখন কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারেরও পদত্যাগের দাবি জানান এনসিপির নেতা-কর্মীরা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

রুমিন অনুসারীদের মহাসড়ক অবরোধ, এনসিপির বিক্ষোভ

আপডেট সময় ১২:০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

অভিবাসন ডেস্ক :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) শুনানিকালে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি-কিল-ঘুষির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে দুই পক্ষ।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানার অনুসারীরা সরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে রোববার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ শুনানি শুরু হয়। জেলার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)-এর সঙ্গে যুক্ত করার খসড়া করেছে নির্বাচন কমিশন। এই ইউনিয়নগুলো হলো বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর। শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন রুমিন ফারহানা। এর বিপক্ষে যুক্তি দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। তিনি ওই তিন ইউনিয়নকে বিজয়নগর উপজেলাতেই দেখতে চান বলে মত দেন।

জানা গেছে, একপর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে, জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতিতে। মো. আতাউল্লাহর অভিযোগ, তিনিসহ তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। অপর দিকে রুমিন ফারহানার দাবি, আতাউল্লাহ পরিচিত মুখ নন। প্রথমে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। তারপর তো আর তাঁর লোকজন বসে থাকবেন না।

এ ঘটনার পর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সরাইলের শাহবাজপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য ও সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও শাহবাজপুর ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমান মুন্সি।

অবরোধকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে মহাসড়কের দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় ভোগান্তি। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী ও সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের অনুরোধে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুমিন ফারহানা শুধু আমাদের এলাকার নেত্রী নন। তিনি জাতীয় নেত্রী। তাঁর ওপর ঢাকায় হামলার প্রতিবাদে আমরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। ইউএনও ও ওসির অনুরোধে আজকে আমরা সরে এসেছি। যারা হামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। রুমিন ফারহানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন নিয়ে যে মতামত দিয়েছেন, আমরা তাঁর পক্ষে রয়েছি।’

একই ঘটনায় বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রুমিন ফারহানা একসময় ছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান রুমিন ফারহানা। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে নির্বাচন করতে চান জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন (মাহবুব শ্যামল) ও এনসিপির মো. আতাউল্লাহ।

এদিকে ইসিতে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহসহ অন্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিকেল ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ হয়।

এনসিপির ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের যুগ্ম সমন্বয়ক সাহিল আহমেদ, সদস্য আসাদুজ্জামান, দ্বীন ইয়ামিন, আরিফ বিল্লাহ হাফেজী, কসবার যুগ্ম সমন্বয়ক মামুন বাতেন, আশুগঞ্জের সমন্বয়ক মো. ডালিম ও যুগ্ম সমন্বয়ক জয়ন্তী বিশ্বাস, নবীনগরের সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি গাজী নিয়াজুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচি থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগসহ বিএনপির নেতা রুমিন ফারহানার বিচারের দাবি করা হয়।

বক্তারা বলেন, ইসিতে রুমিন ফারহানার নেতা-কর্মীরা এনসিপির নেতা আতাউল্লাহ ও অন্য নেতা-কর্মীদের মারধর করেন। আতাউল্লাহর পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তাঁর হাতে আঘাত করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তখন কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারেরও পদত্যাগের দাবি জানান এনসিপির নেতা-কর্মীরা।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/obhibason/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471