অভিবাসন ডেস্ক :: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন ও ক্রাইম) নাসিরুল ইসলাম আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুজনকে আটকের বিষয়টি সত্যি। এ বিষয়ে লালবাগ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিস্তারিত জানাবেন।
ডিবির একটি সূত্র জানা, নেত্রকোনায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- সজীব বেপারী ও রাজীব ব্যাপারী। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
এদিকে নৃশংস এ হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকা-৭ আসন থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসহাক সরকারের চাঁদার লোভের বলি হয়েছেন সোহাগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই এলাকা থেকে ৬ লাখ টাকা করে চাঁদা তুলতেন তিনি। সম্প্রতি চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ নির্ধারণ করে মহিনকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি সোহাগ জানার পর ইসহাক গ্রুপের হাত থেকে বাঁচতে লালবাগের আরেক বিএনপি নেতা হামিদুর রহমান হামিদের গ্রুপে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা চালান। এতে খেপে যান ইসহাক এবং সোহাগকে হত্যার জন্য মহিনকে কাজে লাগান।
এরপরই বুধবার সন্ধ্যার দিকে মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথরের আঘাতে নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা করা হয়। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিন। বাকি দুজনের নাম এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ প্রকাশ করেনি। বিষয়টি নজরে আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে দলের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর অংশ হিসাবে যুবদল নেতা রজ্জব আলী পিন্টু ও সাবাহ করিম লাকিকে দল থেকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নিন্দা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এছাড়া হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা, জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের জনতা।
নেপথ্যে বিএনপি নেতা ইসহাকের চাঁদাবাজি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। চব্বিশের গণ-অভু্যত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপি নেতা ইসহাক এই চাঁদার নিয়ন্ত্রণ নেন।
তিনি এতদিন ধরে সেখান থেকে তার লোকজন দিয়ে মাসিক ৬ লাখ টাকা করে চাঁদা তুলতেন। সোহাগ সবার কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করে তাকে দিতেন। এর মধ্যে সম্প্রতি চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেন ইসহাক। সেইসঙ্গে চাঁদা তোলার দায়িত্ব থেকে সোহাগকে সরিয়ে দেওয়া হয় মাহমুদুল হাসান মহিনকে।
বিষয়টি জানতে পেরে সোহাগ স্থানীয় আরেক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হামিদের গ্রুপে ভেড়ার চষ্টো করেন। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে সোহাগকে হত্যার জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করা হয়। বিএনপি নেতা ইসহাকের পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মহিন গ্রুপর লোকজন।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন—মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার। এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোহাগ দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ব্যবসা করায় ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়সহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আসামিদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে তারা সোহাগের ভাঙারি ব্যবসার গুদাম তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে তাকে এলাকাছাড়া করতে নানারকম ভয় দেখিয়ে আসছিলেন। মূলত এ শত্রুতা থেকে তাকে হত্যা করা হয়।